নিখোঁজের ৭ দিন পর
জয়পুরহাটের কালাইয়ে সেপটিক ট্যাংকে মিলল শিশুর লাশ, বাবা-সৎ মাসহ চারজন আটক

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : কালাইয়ে নিখোঁজের সাত দিন পর চার বছরের শিশু রদিয়া আক্তার রুহির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় শিশুর সৎ নানার দেওয়া তথ্যমতে উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের হিমাইল গ্রামে বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশু রদিয়া আক্তার রুহি হিমাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে।
শিশুর মায়ের দাবি, বিচ্ছেদের পর আদালতের রায়ে রুহিয়ার জন্য প্রতি মাসে ২৩শ’ টাকা করে দিতে হত ওর বাবাকে। সেই টাকা যাতে করে না দিতে হয়, সে জন্য তার সন্তানকে বাবা-সৎমাসহ সবাই মিলে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় শিশুর মা বাদি হয়ে আজ শনিবার (৩১ মে) দুপুরে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রথমে নিহত শিশুর চাচা রেজাউল ইসলামের ছেলে রনি, শিশুর সৎমা আব্দুর রহমানের ২য় স্ত্রী সোনিয়া আক্তার এবং আব্দুর রহমানের শ্বশুর পাঁচবিবি উপজেলার শালট্টি গ্রামের বাসিন্দা জিয়া কসাইকে রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় আজ শনিবার (৩১ মে) দুপুরে শিশুর বাবা আব্দুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন।
পুলিশ, স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিশু রুহি কালাই উপজেলার হিমাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের প্রথম পক্ষের মেয়ে। বিচ্ছেদের পর থেকে তার প্রথম স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে একই গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকেন। মেয়ে রুহি তার মায়ের সঙ্গে থাকলেও প্রতিদিন দাদির সঙ্গে দেখা করতে বাবার বাড়িতে যেত। বিচ্ছেদের পর রুহির মা আদালতে মহরানা, খরপোষ ও সন্তানের ভরণ-পোষণ মামলা দায়ের করেন।
আদালত মহরানা বাবদ তিন লাখ ১৪ হাজার টাকার ও সন্তানের খরপোষ বাবদ প্রতিমাসে ২৩শ’ করে টাকা দেওয়ার রায় দেন। ইতিমধ্যে মহরানার টাকা পরিশোধ করলেও সন্তানের টাকা প্রতিমাসে দিতে হয় তার বাবা আব্দুর রহমানকে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো। গত ২৪ মে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রুহি দাদির সঙ্গে দেখা করতে বাবার বাড়িতে গিয়ে আর মায়ের কাছে ফিরে আসেনি। তখন রুহির কথা জানতে চাইলে রুহির চাচা ও সৎমা জানায়, তার দাদি বাড়িতে না থাকায় তাকে মায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনওইদিন সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন রুহির মা ও নানা-নানীরা। তাকে কোথাও না পেয়ে পরদিন ২৫ মে কালাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রুহির মা। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করেন। একপর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুলিশ রুহির বাবার দ্বিতীয় পক্ষের শ্বশুর জিয়া কসাইকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন তার জামাই (রুহির বাবা) আব্দুর রহমান, মেয়ে সোনিয়া আক্তার (রুহির সৎমা), রুহির চাচা রনি এবং তিনি মিলে শিশুটিকে হত্যা করে মরদেহ বস্তায় ভরে বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ভেতরে ফেলে দিয়েছে। তার দেওয়া ভাষ্যমতে পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রুহির মরদেহ উদ্ধার করে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। রুহির মা পাঁচজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
মন্তব্য করুন