যানজটে কাহিল রংপুরাঞ্চলের যাত্রীরা : সময় যায় পথ শেষ হতেই চায় না

রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ ঈদ উদযাপন করতে রংপুর বিভাগের আট জেলার হাজারো মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ থাকলেও শরীরগুলো ক্লান্ত। ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও যে যেভাবে পারছেন বাস-ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ মোটর সাইকেলযোগে গ্রামে ফিরছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি আসছেন তারা।
গাড়িতে দাঁড়িয়ে বসে কষ্ট করে এলাম। পুরো সড়কে শুধু জ্যাম আর জ্যাম। সাভার, বাইপাইল, নবীনগর, চন্দ্রা, এলেঙ্গা, যমুনা সেতু- ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকেছি। সেতুর এ প্রান্তে সিরাজগঞ্জ মোড়, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও শঠিবাড়ি এলাকাতেও যানজট ছিল। গরম ও যানজটে অনেক কষ্ট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দ।
টানা ১৮ ঘণ্টার ঈদযাত্রা শেষে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় এলাকায় এসে ট্রাক থেকে নেমে কথাগুলো বলছিলেন মমিন নামে এক যুবক। রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাটে এই যুবকের বাড়ি।
তিনি জানান, গাবতলীতে দ্বিগুন দামে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন তদারকি নেই। যে যার কাছে যেমন পাচ্ছে তেমন ভাড়া নিচ্ছে। দুই হাজার টাকা বাসের টিকেট। এ কারণে ট্রাকে পাঁচশ টাকা দিয়ে কষ্ট করে ঢাকা থেকে রংপুরে এসেছেন। আগে যেখানে আট থেকে নয় ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে ১৮ ঘণ্টা সময়েও পুরো পথ শেষ হয়নি তার। মডার্ন মোড় থেকে তিনি সিএনজি অথবা অন্য কোনো বাহনে করে তারাগঞ্জে যাবেন।
যাত্রীরা বলছেন, তীব্র রোদে খোলা গাড়িতে করে ঈদযাত্রা কিছুটা কষ্টকর মনে হলেও সড়কে বড় ধরনের কোনো হয়রানি বা দুর্ঘটনা নেই। তবে এবারও মহাসড়কে যানজট, টিকেট সিন্ডিকেট, পথে পথে ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হয়েছেন বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা। মডার্ন মোড়ে বাস থেকে নেমে গন্তব্যে যেতে রিকশায় চড়েন জহুরুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী। তিনি ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাসে করে রংপুরে এসেছেন প্রায় ১৬ ঘণ্টায়। এজন্য তাকে ১৮০০ টাকা বাস ভাড়া গুনতে হয়েছে।
জহুরুল ইসলাম বলেন, পরিবার ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে আয় রোজগার করছি। বছরে দুইবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে আসি। গতবারের চেয়ে এবার কষ্টটা একটু বেশি মনে হলো। সড়কে সেনাবাহিনী-পুলিশ সবাই আছে, তারপরও তীব্র যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকআপভ্যান ও ট্রাকে চড়ে রংপুর বিভাগের হাজারো নারী-পুরুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। শুধু ট্রাক বা পিকআপভ্যান নয় এ যাত্রায় বাহন হিসেবে রয়েছে বাস, মাইক্রোবাসসহ ছোট ছোট গণপরিবহনও।
আরও পড়ুনএদিকে ঈদে ঘরে ফেরার দীর্ঘ যাত্রাপথে অসুস্থ হওয়া যাত্রীদের সেবা দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। ঘরমুখো যাত্রীদের সমস্যা ও ভোগান্তি কমাতে মডার্ন মোড়ে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র স্থাপন করার পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সও। এই সেবা ঈদের পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে জেলা র্যাব ও পুলিশ।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষেরা অনেক সময় পথে বিপদগ্রস্ত হন। তাদের সাহায্য করার মতো কেউ থাকে না। তবে এখন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।
এছাড়া চিকিৎসা সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিওয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর-দশমাইল-বাংলাবান্ধা ২৫০ কিলোমিটার মহাসড়কটি যানজট ও অপরাধমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে। মহাসড়কে জরুরি প্রয়োজনে সেবা দিতে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে জরুরি সাহায্য বাটন চেপে মহাসড়কে যে কোনো পরিস্থিতিতে হাইওয়ে পুলিশের নিকটবর্তী টহল টিমের সাথে সয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে।
এছাড়া মহাসড়কে যানজট, বিকল্প রাস্তা, ভাড়ার তালিকা, টোলের হারসহ নানা তথ্য পাচ্ছেন অ্যাপ ব্যবহারকারীরা।
মন্তব্য করুন