বগুড়ায় কোরবানীর মাংসের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হলো “চেয়ে পাওয়া মাংস”

স্টাফ রিপার্টার : কোরবানীর ঈদের দিন বিকেল থেকে বগুড়া শহরের কয়েকটি স্থানে বসে এক ব্যতিক্রমী বাজার, যা স্থানীয়ভাবে কয়েক ঘণ্টার মাংসের বাজার নামে পরিচিত। বিকেল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা কোরবানির সংগৃহীত মাংস ব্যাগ বা বস্তায় করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
তবে এবার সেই বাজারে বিস্তৃতি ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে কম। ঈদের দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বগুড়ার রেলওয়ে স্টেশনের সামনে, দুই নাম্বার রেলঘুমটি, সাতমাথার গোহাইল রোডের সামনে ও কলোনী এলাকায় বসে এই অস্থায়ী বাজার।
প্রতিবছর ক্রেতা এবং বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে ভ্রাম্যমাণ এই বাজার। কিন্তু এবছর ছিল একটু নিরবতা। কারণ হিসেবে বিক্রেতা জানান, এবছর এই বাজারে মাংসের সরবরাহ কম। এই বাজারের প্রধান ক্রেতা হলেন শহরের যারা নানা কারণে কোরবানি দিতে পারেননি। তারা এখান থেকে মাংস কিনে ঈদের দিনে খান।
গরিব মানুষরা ঈদের দিন সারা শহর ঘুরে ঘুরে যে মাংস সংগ্রহ করে, তার কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে বাড়ি ফেরার সময় বিক্রি করে। এতে মাংস বিক্রি করে তারা বেশ কিছু অর্থ নিয়ে বাড়ি ফেরে। বিকেল থেকেই ভ্রাম্যমাণ এসব বাজারে ডিজিটাল মেশিন নিয়ে তিন থেকে চারজন বিক্রেতা বসে থাকেন।
আর বিক্রেতারা সারাদিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে পাওয়া মাংস নিয়ে এই বাজারে নিয়ে আসেন। এবারের বাজারে মাংস কেনা হচ্ছিল থেকে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর বিক্রেতারা বিক্রি করেছে ৬০০ থেকে ৬৮০ টাকায়।
আরও পড়ুনবগুড়া সাতমাথায় সামনে এবছরই প্রথম মাংস কিনছিলেন মির্জা আব্বাস নামের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। তিনি করতোয়া’কে বলেন, তিনি মূলত ফল ব্যবসায়ী। কয়েক ঘণ্টার হয়েছিলেন মাংস ব্যবসায়ী। তিনি জানান, এবছর মাংস সংগ্রহকারীরা তেমন একটা মাংস পায়নি। তিনি কিনেছেন ১ মন মাংস। কিনেছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন সাড়ে ৭শ’ টাকা কেজিতে।
বগুড়ার সোনাতলা থেকে বড় বোন, মা ও খালা, স্ত্রী ও দুই সন্তদানকে নিয়ে সাথে শহরে মাংস সংগ্রহের জন্য নিয়ে ঈদের দিন দুপরে শহরে এসেছেন সুলতান হোসেন। বললেন গরুর মাংসের এত দাম বেড়েছে যে বছরে একবারও গরুর মাংস কিনে খাওয়া যায় না। তাই সবাইকে নিয়ে এসেছেন যাতে করে দুই একদিন খাওয়া যায় এবং বাদ-বাকি বিক্রি করে কিছু টাকা নিয়ে গেলে অন্য খরচও করতে পারব। তিনি এবং তার পরিবার মিলে ৭ কেজি মাংস পেয়েছেন। ২ কেজি রেখে ৫ কেজি ৩৫শ’ টাকায় বিক্রি করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, তিনি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এবছর কোরবানী দিতে পারেননি। সেই জন্য ভাল মাংস কেনার জন্য এসেছেন। পরিবারের জন্য ১০ কেজি মাংস কিনলেন ৭ হাজার ৫শ’ টাকায়। বললেন কুরবানির ঈদে তার পরিবারের সন্তান এবং স্ত্রীরা যেন মন খারাপ না করে সেইজন্য এখান থেকে মাংস কিনলেন।
গত প্রায় ১০ বছর আগে থেকে গড়ে ওঠার কয়েক ঘণ্টার এই বাজারটি একদিকে যেমন সংগ্রাহকদের জন্য কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করে, তেমনই যারা নানা কারণে কোরবানি দিতে পারেননি তারা কোরবানির মাংস কেনার সুযোগ পান।
মন্তব্য করুন