ভিডিও সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫

জৌলুস হারাচ্ছে  

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুর্বিষহ দিন কাটছে মৃৎশিল্প কারিগরদের

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুর্বিষহ দিন কাটছে মৃৎশিল্প কারিগরদের

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : আধুনিক বিশ্বায়নের ফলে তুলনামূলক কম দামে অধিকতর টেকসই সিলভার, মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা দিনদিন কমে যাওয়ায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে জৌলুস হারাচ্ছে মৃৎশিল্প।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় এক সময়ের চাহিদার তুঙ্গে থাকা মৃৎশিল্প কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে মৃৎশিল্পের কারিগরদের অর্ধাহারে অনাহারে দুর্বিষহ দিন কাটছে। সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ভালো নেই তাদের সামাজিক সহ পারিপার্শ্বিক অবস্থানও।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব পুরুষদের পেশা ধরে রাখতে এখনো অনেক পরিবার তাদের হাতের নান্দনিক ছোঁয়ায় মাটির থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, ঘটি-বাটি, বদনা, পুতুল, ফুলের টব, ফুলদানী, জীবজন্তু, পাখিসহ বাংলার চিরাচরিত সব নিদর্শন তৈরি করছেন।

দুই এক বছর আগেও এই উপজেলায় প্রায় শতাধিক কুমার পরিবার ছিল। কিন্তু বাজারের মৃৎশিল্পের কদর কমে যাওয়ায় পেশাগত পরিবর্তনের কারণে তা অনেকটাই কমে গেছে। এখনো সবচেয়ে বেশি কুমার পরিবারের বসবাস উপজেলার পালপাড়া, গোবিন্দপুর, পাঁচপীর ও কুমারপাড়া গ্রামে। গ্রামগুলোতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টির মতো পরিবার এখনো টিকে আছে, যারা বাপ দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও।

উপজেলার পাঁচপীর গ্রামের তেমনি এক পরিবারের সদস্য নীলকান্ত (৭৮) বলেন, এই শিল্পটি আর আগের মত নেই। স্টিল, সিরামিক, মেলামাইন, প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈজসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এখন মাটির জিনিসের চাহিদা নাই বললেই চলে। বেচা-বিক্রি কমে গেছে। এই এলাকায় এখন আর মাটি পাওয়া যায় না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি ভ্যানে করে কিনে আনতে হয়।

তাতে করে মাটির দাম, ভ্যান ভাড়ার খরচ বেড়ে যায়। সেই অনুযায়ী আয় হয় না। সরকার থেকে আমরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনা। আগে এই এলাকার প্রায় অধিকাংশ পরিবারই এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি পরিবার এই কাজের সাথে যুক্ত আছি। আমরা যারা এই পেশার মায়া ছাড়তে পারছি না, তারা কষ্ট হলেও বাপ-দাদার এই পেশাটাকে ধরে রেখেছি।

আরও পড়ুন

উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের কুমার পরিবারের সদস্য সান্তনা রানি জানান, শুধু শুনেই থাকি এই শিল্পের কারিগরদের জন্যে নাকি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সহ সরকার থেকে অনেক সুবিধা দেয়। কিন্তু বাস্তবে কিছুই পাইনা। শুনেছি সমাজসেবা অফিস থেকে নাকি এই মাটির জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে ঋণও দেয়। কিন্তু আমরা তো শিক্ষিত না যে এত কিছু বুঝবো।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অ.দা.) আব্দুল আউয়ালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এই শিল্পের জন্যে প্রশিক্ষণ বা আর্থিক অনুদান বিষয়ক কোনো প্রকল্প এখনো ঘোড়াঘাটে আসেনি। যখন আসবে তখন সমাজসেবা অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি যদি সরকারি অনুদান আসে, সেই অনুদানও তারা পাবেন।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ইতিমধ্যে সরেজমিনে তাদের বেহাল অবস্থা পরিদর্শন করেছি। তারা কি কি ধরনের সামগ্রী তৈরি করতে পারে তাও দেখেছি।

তাদের তৈরি মাটির কিছু সামগ্রীর নমুনা আমি ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে আমার তত্ত্বাবধানে রেখেছি। তারা যাতে তাদের তৈরি সামগ্রী গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত বিক্রি করতে পারে দ্রুত সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই উপজেলায় মৃৎশিল্পের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। পরবর্তীতে মৃৎশিল্প নিয়ে সরকারি প্রকল্প আসলে সেই প্রকল্পের সর্বোচ্চ সুবিধা যাতে তারা পায় তার ব্যবস্থা করবো।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে ইউকেএম

এবার নবাবগঞ্জে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার হেক্টর জমি

ভারতে ২০০ লোকের ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের বাংলাদেশি শিশু!

সিরাজগঞ্জে ডিজিটাল ডাস্টবিনগুলো অকেজো হওয়ায় দুর্ভোগে পথচারী ও বাসিন্দারা

অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য এবার নিষিদ্ধ হচ্ছে ইউটিউব

বিনোদন নির্মাতা রেদওয়ান রনির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ