সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আদেশে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাতিল করেছেন, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে দেশটির বিচ্ছিন্নতা শেষ করতে এবং গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে সাহায্য করার ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, তার সহযোগী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, মাদক পাচারকারী, রাসায়নিক অস্ত্র কার্যক্রমের সাথে জড়িত ব্যক্তি, ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) এবং ইরানের দালালদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হবে।
গত ডিসেম্বরে ইসলামিস্ট নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের আক্রমণের ফলে আসাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং এরপর থেকে সিরিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি এক্স (টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে বলেন, ট্রাম্পের সিরিয়া নিষেধাজ্ঞা বাতিল ‘প্রত্যাশিত পুনর্গঠন ও উন্নয়নের দরজা খুলে দেবে’।তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বাধা দূর করবে এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উন্মুক্ত করবে।
গত মে মাসে, রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ও ট্রাম্পের বৈঠকের সময় ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন, যা একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়। এরপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে এগিয়ে আসে। কংগ্রেসের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ রদ করার পক্ষে জোর দিচ্ছেন, অন্যদিকে ইউরোপও তাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।
মার্কিন বিশেষ দূত থমাস ব্যারাক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিরিয়াকে একটি সুযোগ দেয়া প্রয়োজন, এবং এটাই ঘটেছে।’ তিনি সোমবারের (৩০ জুন) এই সিদ্ধান্তকে ‘একটি অত্যন্ত কঠিন, বিশদ ও জটিল প্রক্রিয়ার সমাপ্তি’ বলে বর্ণনা করেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই আদেশ অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হায়াত তাহরির আল-শাম (আল-কায়েদা-সম্পর্কিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যা শারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন) এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে সিরিয়ার তালিকাভুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনতবে মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে, বিশেষ করে ‘ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, বিদেশি সন্ত্রাসী মোকাবেলা, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার এবং ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিষিদ্ধকরণ’-এর মতো বিষয়গুলোতে।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত মার্চে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে তিন দিনের হত্যাকাণ্ডে ১,৫০০-এর বেশি সিরীয় আলাউয়ি নিহত হওয়ার পেছনে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ভূমিকা ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
রয়টার্সের অনুসন্ধানে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সিরিয়াবাসী আশা করছেন, নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে দেশটিতে মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ সহজ হবে, বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উৎসাহিত হবে।
গত মে মাসে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট অন্তর্বর্তী সিরিয় সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেনের জন্য সাধারণ লাইসেন্স দিয়েছে। তবে সিজার অ্যাক্টসহ আইন দ্বারা অনুমোদিত কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা জরুরি।একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, আমরা এখন সিজার অ্যাক্টের স্থগিতাদেশের মানদণ্ড বিবেচনা করব।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আসাদ সরকার ও প্রধান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সোমবার (৩০ জুলাই) স্বাক্ষরিত আদেশ অনুসারে, ২০০৪ সালে জারি করা জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আদেশগুলো বাতিল করা হবে। এছাড়াও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য বিধিনিষেধ শিথিল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন