অদক্ষ-ব্যর্থ অভিযোগে সিলেট ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি,সাবেক মেয়র আরিফুলের
_original_1751459123.jpg)
সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রশাসনিকভাবে ‘অদক্ষ ও ব্যর্থ’ দাবি করে তার প্রত্যাহার চেয়ে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি নেতা ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আজ বুধবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। আরিফুল হক এ কর্মসূচিকে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের কর্মসূচি বলে ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকনেতারাও যোগ দেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় আরিফুল কোর্ট পয়েন্ট এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে প্রায় দেড়শ মানুষ নিয়ে অবস্থান নেন। তবে কর্মসূচি শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। এ সময় মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুকের সঞ্চালনায় সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।
সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ–বিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক আবদুস সালাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতারা আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে সিলেটের সব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।
সমাবেশ চলাকালে আরিফুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি কোনও ধরনের নোটিশ ছাড়াই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। কোনও ধরনের সময় কিংবা নোটিশ না দিয়ে নগরের মেজরটিলা এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। ডিসি এই অঞ্চলের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাই ভুক্তভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।’
আরও পড়ুনসমাবেশে বক্তৃতায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ডিসি পাথর–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আজ এক সভা ডাকেন। তবে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহনশ্রমিক নেতা, কেউ তার বৈঠকে যাননি। নির্যাতন–নিষ্পেষণ করার পর ডিসি বলছেন, এখন আসো। তাই সবাই ঘৃণাভরে এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৪ জুলাইয়ের (শুক্রবার) মধ্যে ডিসিকে প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর মনোমালিন্য ও দূরত্ব চলছে। এখন ইজারা বন্ধ থাকা সিলেটের পাথরকোয়ারি চালুর দাবিতে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধতার সুযোগে আরিফুল হক জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচিতে নেমেছেন।
এই বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এটা একান্তই তার নিজস্ব কর্মসূচি। তবে সিলেটে একটা অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালুর দাবিতে সম্প্রতি পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি, পরিবহন বন্ধ রাখাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতা, পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বৈঠকে বসেন ডিসি। সেই বৈঠকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি শাহজাহান আলীসহ পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণকাজের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে। সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কাজের অংশ হিসেবেই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। হঠাৎ আমার অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক।
মন্তব্য করুন