বগুড়ায় বিদ্যুৎ হত্যাকান্ড দম্পতি ধরা পড়লেও অন্য আসামিরা অধরা

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় বিদ্যুৎ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাদশা ও রুম্মা দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তারা মামলায় অভিযুক্ত আসামি নয়। এ হত্যা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্তা খুঁজে পায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এস আই তন্ময় কুমার বর্মণ বলেন, হত্যা মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যে তাদের হাত ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলার বাদি শহরের বৃন্দাবনপাড়ার দুলাল শেখ বলেন, ওই দম্পতি হুকুমের আসামি। তাদের নির্দেশেই দুর্বৃত্তরা তার ছেলে বিদ্যুৎকে হত্যা করে। তবে এই হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া বাবা ও ছেলেসহ এজাহারভুক্ত ৬ আসামি এখনও অধরা। এতে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার আসামি শহরের বৃন্দাবনপাড়ার এনামুল হক বাদশা ও তার স্ত্রী রুম্মাকে গত ১ জুলাই রাতে শহরের নামাজগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে তারা আত্মগোপন করে করেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। এরপর আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তিনি আরও জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।
এদিকে, বিদ্যুৎ হত্যাকান্ডের ২০ দিন পার হয়ে গেলেও এজাহারভুক্ত আসামিরা কেউ ধরা পড়েনি। গত ১৩ জুন প্রকাশ্যে দিনের বেলায় শহরের কাটনারপাড়ায় বিদ্যুকে হত্যা করে পালিয়ে যায় প্রধান আসামি রনি, তার ছেলে রুকু ও ভাড়াটিয়ে প্রতিবেশি শাওনসহ ৬ দুর্বৃত্ত। নিহত বিদ্যুৎ শহরের বৃন্দাবন দক্ষিণপাড়ার দুলাল শেখের ছেলে। হত্যাকান্ডের পর দুলাল শেখ এই তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন দুর্বৃত্তসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ (৩৩) কাটনারপাড়া ঈদগাহ সংলগ্ন স্থানে জাহিদের ঘর ভাড়া নিয়ে অটোরিকশার গ্যারেজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। মামলার প্রধান আসামি রনি তার বন্ধু ছিল। রনি বিদ্যুতের গ্যারেজ ইয়াবা বিক্রির স্পট বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে বাধা দেন বিদ্যুৎ। তিনি কিছুতেই তার গ্যারেজে ইয়াবা বিক্রি করতে দিবেন না বলে রনিকে সাফ জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনপরে এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। বিদ্যুৎ রনির কাছে বন্ধু থেকে শত্রু বনে যান। এই বিরোধের জের ধরে রনি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে রনি ও তার সহযোগীরা হত্যার মিশনে নামে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে ইয়াবা ব্যবসায়ী রনির ‘এক ভাবি’র মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বৃন্দাবনপাড়ার বাড়ি থেকে কাটনাপাড়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন গ্যারেজের পশ্চিম পাশের গলিতে ডেকে নেয়া হয় বিদ্যুৎকে।
এরপর সেখানে রনির নেতৃত্বে ওই ৬ দুর্বৃত্ত গত ১৩ জুন শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে বার্মিজ চাকু, লোহার রড ও এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে বিদ্যুতের ওপর হামলা চালায়। তারা লোহার রড, এসএস পাইপ দিয়ে মারপিট করে গুরুতর জখম করে বিদ্যুৎকে। এক পর্যায়ে প্রধান আসামি রনি বার্মিজ চাকু দিয়ে রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎকে পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে।
ছুরিকাঘাতে বিদ্যুতের পেটের ভুড়ি বের হয়ে যায়। ছুরিকাঘাতের সময় অন্য আসামিরা বিদ্যুতের দু’হাত ধরে রেখেছিল। পরে বিদ্যুৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বিদ্যুৎকে উদ্ধার করে একটি অটোরিকশা করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন