একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ মারাত্মক জনবল সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অথচ চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন।
সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রেষণে রয়েছেন অন্য হাসপাতালে। এদিকে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই পুরো হাসপাতালের আউটডোর-ইনডোরের রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। সেবা না পাওয়ায় ফেরত যাচ্ছেন প্রতিদিন শত শত রোগী। ভোগান্তির কারণে হাসপাতাল বিমুখ হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষজন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যয়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অবকাঠামোগতভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) সহ মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কাগজে-কলমে ৫ জন মেডিকেল অফিসার থাকলেও এরমধ্যে ২ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং ১ জন জেলা কারাগারে ডেপুটেশনে রয়েছেন।
এছাড়া ৪ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে ১ জন ডেপুটেশনে কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে এবং ১ জন হজব্রতের কাজে সৌদি আরবে রয়েছেন। ফলে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং ১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৫ জন রয়েছেন রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এরমধ্যে যিনি রাতে ডিউটি করেন, পরদিন তার অফ ডে থাকে। আবার কেউ ছুটিতে গেলে আরও টানাপোড়েন শুরু হয়। এছাড়া দিনে ডিউটি করলে রাতে তার ডিউটি থাকে না। আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগ মিলে মাত্র ১ জন চিকিৎসক থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
অন্যদিকে নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। চিকিৎসক, স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডেন্টাল, ইপিআই টেকনিশিয়ান, সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ অর্ধশতাধিক পদ রয়েছে শূন্য। এছাড়াও অপারেটরের অভাবে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে কার্যক্রম, রয়েছে ওষুধের অপ্রতুলতা। জরুরি বিভাগে একজনও ওয়ার্ড বয় না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও সঠিকভাবে পাচ্ছেন না রোগীরা।
আরও পড়ুনমেডিকেল অফিসার ডা. মনিষা বলেন, হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরের রোগীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ইমার্জেন্সিতে মুমূর্ষু রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। সঠিকভাবে রোগী না দেখে প্রেসক্রিপসন দিতে পারছেন না। তিনি একা কিভাবে হাসপাতালের এত রোগীর চিকিৎসা দিবেন। এদিকে চিকিৎসক না থাকায় প্রায় আড়াই বছর ধরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত রতিগ্রাম স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার উমরমজিদ ও পাঁঙ্গা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা চলছে ফার্মাসিস্ট দিয়ে। একজন স্যাকমো (উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) পরিচালনা করছেন নাজিমখান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ফলে প্রায় আড়াই লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছেন।
রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম রসুল রাখী বলেন, চিকিৎসকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পদ শুন্য থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বার বার চিকিৎসক চেয়েও কোন চিকিৎসক পাচ্ছেন না। অনেকে ডিপুটেশনে অন্যত্র রয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল ইমরান বলেন, জেলার সব হাসপাতালেই একই অবস্থা। অনেক চিকিৎসক বেতন নেন কিন্তু রাজারহাট থেকে প্রেষণে রয়েছেন অন্য হাসপাতালে। যেখান থেকে যিনি বেতন নেন, সেখানে তার অবস্থান হওয়া উচিত। তাহলে চিকিৎসা ব্যহত হত না।
মন্তব্য করুন