ভিডিও মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দুই শিক্ষকের জটিলতা

নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দুই শিক্ষকের জটিলতা, ছবি সংগৃহীত

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্র্রি কলেজে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমামুল হোসেন নিজেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত মাহবুব আলম নিজেকে এখনও অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনে নানাভাবে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইমামুল হোসেন বলেন, বদলগাছী মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করলে কলেজ পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার কলেজের জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে ১৩তম প্রভাষক মাহবুব আলমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। জ্যেষ্ঠতার বিধি লঙ্ঘন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর নিয়োগ বিধি অনুযায়ী তিন বছরের সহকারী অধ্যাপকসহ ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও জাল-জালিয়াতি করে মাহবুব আলমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতি ও জ্যেষ্ঠতার বিধি লঙ্ঘন করে মাহবুব আলমকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মাহবুব আলমকে ২০২৪ সালের ১৭ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০২৪ সালের ৩ জুলাই অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বেতন বন্ধের আদেশ দেন মাউশি, যা অদ্যাবধি কার্যকর আছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে পূর্বের কমিটি বাতিল হয় এবং পরবর্তী প্রজ্ঞাপনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ওই বছরের ২৭ আগস্ট কলেজ পরিচালনা কমিটি মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং কলেজের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। মমতাজ জাহান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় গত ৭ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি বহির্ভূতভাবে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন। ফজলে হুদা দায়িত্ব পেয়েই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বহাল রেখে মাহবুব আলমকে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করান। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহানের ওপর মাহবুব আলম ও কলেজ কমিটির সভাপতি বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। গত ৮ মে তালা ভেঙে মাহবুব আলম অধ্যক্ষ কক্ষে প্রবেশ করেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ লক্ষাধিক টাকা লুট করেন। এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে হুদার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আদেশকে তিন মাসের জন্য স্থগিত করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে পূর্বের কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান আবারও স্বপদে ফিরে আসেন। এদিকে গত ৭ জুন ভারপ্তাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান মারা যান। মমতাজ জাহানের মৃত্যুর পর গত ২৫ জুন মাহবুব আলমের অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহালের আদেশটি বাতিল করে কলেজের সহকারী অধ্যাপক ইমামুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি লুৎফর রহমান।

ইমামুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ২৯ জুন তিনি অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ মাহবুব আলম, কলেজের প্রভাষক মেহেদী হাসান, আজাদ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাহবুব আলম ও তার লোকজন ইমামুলকে জীবননাশসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব আলম বলেন, আমি বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বৈধ অধ্যক্ষ। ৫ আগস্টের পর মব সৃষ্টি করে আমাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়। জোরপূর্বক পদত্যাগ বিধিসম্মত নয় বলে পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফজলে হুদাকে বিধি মোতাবেক কলেজ পরিচালনা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। এই অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও তার পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পুনরায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমান অ্যাডহক কমিটি স্থগিত করা হয়েছে এমন পরিপত্র বা আদেশ তারা দেখাতে পারেননি। তারা শুধু হাইকোর্টে রিট করেছেন এবং হাইকোর্ট এই কমিটির ওপর তিনি মাসের জন্য স্থগিতাদেশ এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের আদেশের কথা বলছেন। রিট শুনানি না হতেই আগের কমিটি কিভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারে?

ইমামুল হোসেনকে দায়িত্বগ্রহণে বাধা এবং শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ইমামুল হোসনকে কোনো প্রকার শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক যোগে ঢাবির ১২ নেতাকে অব্যহতি দিলো ছাত্রদল 

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

নেত্রকোনায় অটোরিকশার চার্জার খুলতে গিয়ে প্রাণ গেল চালকের

স্বর্ণের দাম কমলো ভরিতে ১৫৭৫ টাকা

বগুড়ার গাবতলীতে স্বামী-স্ত্রীসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার