বিনা অর্থে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন রাণীনগরের নিরু মন্ডল
 07.07.2025_original_1751902667.jpg)
নওগাঁ প্রতিনিধি : রেললাইনের মাধ্যমে দুইভাগে বিভক্ত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা। গোনা ইউনিয়নের অনেক গ্রাম রেললাইনের পূর্ব পাশে অবস্থিত। যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদে নানা প্রয়োজনে যেতে উপজেলার বড়বড়িয়া, বিজয়কান্দি, আকনাসহ দশটির বেশি গ্রামের বাসিন্দাদের রেললাইনে একটি গেট না থাকার কারণে মাত্র ৪ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত গোনা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে ১৫কি.মি. রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এমন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে রেল কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে বড়বড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা নিজ দায়িত্বে বড়বড়িয়া-গোনা পাকা রাস্তার রেললেইনের নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন স্থানে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করে। সেই গেটে বিনা পয়সায় গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন বড়বড়িয়া গ্রামের মৃত মকবুল মন্ডলের ছেলে নিরু মন্ডল। প্রতিদিন যে’কটি ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল কিংবা অন্যান্য যানবাহন পারাপার হওয়ার সময় যে টাকা দেয় আর নিজের অর্থায়নের ছোট্ট দোকানে যে’কটি টাকা বিক্রি হয় সেই দিয়ে কোনমতে চলছে নিরুর পরিবার। নিরু দিন-রাত এমন মহৎ দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয়সহ কারো নজর নেই তার প্রতি।
গেটম্যান নিরু মন্ডল জানান, বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও লোক না পাওয়ার কারণে গেইট করা সম্ভব হয়নি। ইতোপূর্বে কোন গেটম্যান না থাকার কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে একাধিকবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ফলে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি দিন দিন চরমে রূপ নিলে প্রায় বছর খানেক আগে গ্রামবাসীরা আর্থিকভাবে মাসিক বেতনের মাধ্যমে তাকে অস্থায়ী রেলগেটে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। অপরদিকে নিরু শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে তেমন ভারী কাজ করতে পারেন না। তাই গ্রামবাসীদের আশ্বাসের ওপর গেটম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে গ্রামবাসীরা আর নিরুর খোঁজখবর রাখে না।
বড়বড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হাসিবুল ইসলাম রাজু বলেন, নিরু গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছে বলেই বড়বড়িয়া রেলগেট সহজেই পার হয়ে হাজার হাজার মানুষ কম সময়ে এপার-ওপার চলাচল করতে পারছে। কাউকে আর ১৫কিলোমিটার ঘুরে গোনা ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য স্থানে যেতে হচ্ছে না। গ্রামবাসীদের অন্তত গরীব দিনমজুর নিরুকে মাসিকভাবে সহযোগিতা করা উচিত। একাধিকবার এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যদি নিরু তার দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান তাহলে আবার ১৫কি.মি. রাস্তা ঘুরে যাওয়ার ভোগান্তিতে পড়তে হবে সবাইকে। তাই দ্রুতই গ্রামবাসীসহ চলাচলকারী সকল পথচারীদের নিরুর পাশে দাঁড়ানোর বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনসান্তাহার রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জানান, রাণীনগরের বড়বড়িয়া রেলগেট অনুমোদিত নয়। তাই ওখানে দায়িত্ব পালনকারীকে নিজ দায়িত্বে সব কিছু করতে হবে। ওই রেলগেটসহ আরও কয়েকটি রেলগেট অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদিত হলে পরবর্তীতে আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাকিবুল হাসান দৈনিক করতোয়া’কে জানান, খোঁজ খবর নিয়ে নিরু মন্ডলের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য করুন