খাঁচার গাড়িতে চার সন্তান পথে পথে মায়ের কান্না

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : একটি খাঁচার মতো দেখতে লোহার তৈরি গাড়ি। সেই গাড়ির ভেতরে বসে আছে তিনটি ১৩ মাস বয়সী শিশু। বাইরে থেকে ঠেলছে সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে মরিয়ম। পাশে আছেন তাদের মা মোছা. জান্নাত আক্তার। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের দেখা মেলে ঠাকুরগাঁও শহরের রাস্তায়।
মোছা. জান্নাত আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয় মোহাম্মদ হাবিল এর সাথে, স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী তিনি। বর্তমানে থাকেন ঠাকুরগাঁও শহরের পরিষদপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায়। জান্নাত আক্তার জানান, ‘স্বামী একদম খোঁজখবর রাখে না। আমি একাই আমার চারটা সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। কোনো ইনকাম নাই, খাওয়ার ঠিক নাই।
কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। তখন নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার চিন্তাও আসে। কিন্তু মেয়ে মরিয়ম আর এই তিনটা ছোট বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আটকাই’ এই কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জান্নাত। তিনি আরও বলেন, আমি একটা খাঁচার মতো গাড়ি বানাইছি যাতে বাচ্চাগুলারে নিয়ে বাইরে যেতে পারি। শহরে শহরে ঘুরি, সাহায্য চাই। কেউ কিছু দেয়, কেউ দেয় না। কিন্তু চেষ্টা করি যেন খালি পেটে ঘুমাতে না হয় ওদের।
অভাবের তাড়নায় এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথেও এগিয়ে গিয়েছিলেন জান্নাত। এমনকি নিজের কিডনি বিক্রি করেও কিছু টাকা জোগাড়ের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু নিজের শারীরিক অসুস্থতা এবং ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য সেই পথ থেকেও সরে আসতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুনজান্নাত আক্তার একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই চান, আর চান বাচ্চাগুলার একটা ভবিষ্যৎ। তিনি সরকারের কাছে আবেদন করে বলেন, যদি একটা ছোট ঘর পাই, আর একটু সাহায্য পাই, তাহলে বাচ্চাগুলারে নিয়ে একটু শান্তিতে বাঁচতে পারব।
পরিষদপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেখি জান্নাত রাস্তায় বাচ্চাগুলারে নিয়ে ঘুরছে। খুব কষ্ট লাগে। মানুষ হিসেবে আমরা যদি এগিয়ে না আসি, তাহলে সমাজ কেন থাকবে? এই প্রখর রোদের মধ্যেও রাস্তায় বের হয়েছেন জান্নাত আক্তার, শুধু সন্তানদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিতে।
মন্তব্য করুন