পান চাষে মন্দা, লোকসানের মুখে চাষিরা

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরের পান শুধু উলিপুরে নয়, আশপাশের জেলাতেও খ্যাতি অর্জন করেছিল। তবে দিনে দিনে এই ঐতিহ্যবাহী পান (বরজ) চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। উৎপাদনের তুলনায় খরচ বেশি ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পানের বরজ তুলে অন্য ফসল চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পান্ডুল, তবকপুর, ধরনীবাড়িসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় চার শতাধিক পানের বরজ রয়েছে। বিয়ে, উৎসব বা অতিথি আপ্যায়ন সবক্ষেত্রেই পান-সুপারি অপরিহার্য। এটি এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার পরিচয় দেয়।
পান চাষিরা জানান, বরজ তৈরির উপকরণের দাম বেশি এবং পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বাপ-দাদার পারিবারিক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অথচ একসময় এসব পান চাষিদের কাছে পানের বরজগুলো ছিল একেকটি ব্যাংকের মতো।
যেকোন আর্থিক প্রয়োজনে বরজ থেকে পান পাতা ছিঁড়ে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চাহিদা মেটাতেন তারা। তবে আগে অনেকেই পান চাষ করে স্বাবলম্বী হলেও এখন নানা কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা।
আপুয়ার খাতা গ্রামের বরজ মালিক বিমল চন্দ্র রায় বলেন, পানের বরজ দিয়ে বাবা-দাদাদের সংসার চালতো। তখন পান ছিল লাভজনক ব্যবসা। বাবা মারা যাওয়ার পর বরজ বন্ধ হয়। তারপর ২০১৫ সালে দুই ভাই পৃথকভাবে এক একর জমিতে চারটি বরজ তৈরি করি। এখন প্রতিবছর প্রতিটি বরজের জন্য ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে বরজ মেরামত করতে হয়।
আরও পড়ুনসে অনুযায়ী লাভ হয় না। ভাদ্র মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কিছুটা লাভ হলেও সারাবছর লোকসান গুণতে হয়। তবকপুর বাড়াইপাড়া গ্রামের সুকুমার রায় বলেন, আগে প্রতি আঁটি (একশ’) ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হতো। সেই পান এখন ৫০-৬০ টাকায় নেমে এসেছে। আগের তুলনায় খরচ বাড়লেও দাম কমে গেছে।
পান্ডুল এলাকার পানচাষি মনোজিৎ কুমার জানান, এখন অনিয়মিত বৃষ্টি, অতিরিক্ত দাবদাহ এবং ঠাণ্ডায় ঠিকমত পান গাছ বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া নানান রোগবালাই পোকামাকড় তো আছেই। বাঁশ, ছন, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে গেছে। আগে পাইকাররা সরাসরি বরজে এসে পান কিনে নিয়ে যেতেন।
এখন বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয়। ফলে খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। চারুবালা রাণী বলেন, পুরুষের পাশাপাশি পানের বরজে আমরাও কাজ করি। বরজে পানি দেওয়া, গাছের পাতা পরিষ্কার করা, রোগাক্রান্ত পাতা আলাদা করা। কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় ঠিকভাবে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষিরা পান চাষ করছেন। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত এসব পান চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন