রংপুরের তারাগঞ্জে যুবকের অজ্ঞান হওয়ার অভিনয়ে প্রাণ যায় দুই ব্যক্তির

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : ‘হামরা চোর-ডাকাত নোয়াই। মুই রূপলাল মুচি, তারাগঞ্জ বাজারোত জুতা সেলাই করোক। হামাক ছারি দাও মোর বাড়ি বেতলি হাসপাতালের গোরত ও ওমরা মোর জামাই।’
এভাবে মুচি রূপলাল দাস নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও যখন ভ্যান চোর, ভ্যান চোরা বলে উপস্থিত লোকজন বলাবলি করছিল তখন হতাশায় রূপলাল ও তার ভাগিনী জামাই চারপাশে নিরব হয়ে তাকাছিলেন। কেননা ঘটনাটি রূপলালের বাড়ি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই ঘটছে। ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায় রংপুরের মিঠাপকুর থেকে আসা ভাগিনী জামাই প্রদীপ দাস ও রূপলাল দাস ভ্যানে বসে আছেন। ভ্যানের চারিপাশে জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে রেখেছেন অর্ধশত লোকজন। মেহেদী নামের এক যুবক রূপলাল ও প্রদীপ দাসকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে চলেছেন। প্রশ্নের উত্তরে নিজেরা দিতে থাকলেও। লোকজন বারবার উত্তেজিত হযে দুইজনকে মারধর করতে থাকেন। এসময় মেহেদী নামের এক যুবক তাদের মারধর না করে পুলিশে দেওয়ার কথা বলে লোকজনকে থামানোর চেষ্টা করেন। এসময় রূপলাল ও প্রদীপ দ’ুজনেই তাদের চোর অপবাদ না দিয়ে এবং পুলিশের হাতে তুলে না দেওয়ার জন্য হাতজোর করেন। পরে তাদের ভ্যানে থাকা ব্যাগের মধ্যে প্লাস্টিকের বোতলে ভরা তরলজাতীয় কিছু দেখতে পান। এসময় এক যুবক বোতল খুলে ঘ্রাণ নিয়ে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেন। সেই অভিনযে লোকজন উত্তেজিত হয়ে রূপলাল ও প্রদীপকে মারধর করে আধামরা করে তাদের ভ্যানে করেই বুড়িরহাট বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে ভ্যান চোর ধরা পড়েছে বলে প্রচার করলে বাজারে আসা উত্তেজিত জনতা বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়েয় মাঠে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তাদেরকে মারধর করে।
আরও একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদ্যালযে মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করার সময় রূপলালে পরনের বস্ত্র খুলে যাওয়ায় মৃত্য যন্ত্রনার পরেও বার বার পরনের কাপড়টি ঠিক করছেন। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বুধবার বিকেলে বুড়িরহাট বাজারে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন জানান, দুই ব্যক্তিকে যখন বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করা হচ্ছিল তার প্রায় আধাঘন্টা পরে পুলিশের দুটি ভ্যান আসে। সেখানে প্রায় ১০-১২ জন পুলিশ এসে জনতার ভির ঠেলে এগিয়ে যায়। এসময় উত্তেজিত লোকজন আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে তারা ফিরে চলে যায়। এরপর দীর্ঘ এক ঘণ্টা পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসলে লোকজন সরে যায়।
স্থানীয় সযার ইউনিয়নের সাবেক সদস্য দুলাল হোসেন বলেন, নিহত দুই ব্যক্তির ভ্যান যারা আটক করার পর তাদের ভ্যানে প্লাস্টিক বোতলের ঘ্রাণ নিয়ে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেন, তাদের কারণেই ওদের মৃত্যু হয়েছে। অজ্ঞানের অভিনয় না করলে হয়তো তারা বেঁচে যেতো।
মন্তব্য করুন