পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন
নাটোরে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রার্দুভাব হাসপাতালে ভর্তি দেড়শ’ রোগী

নাটোর প্রতিনিধি : পানিবাহিত সমস্যার কারণে নাটোরে হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা, ঘোড়াগাছা, কাঁঠালবাড়ীয়া, ডোমপাড়ামাঠ, বঙ্গজলসহ কয়েকটি মহল্লার অন্তত ১৪৭ জন বিভিন্ন বয়সী মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এরমধ্যে শিশু ও নারীসহ ৬৮ জন এবং ৭৯ জন পুরুষ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা রয়েছেন। ইতোমধ্যে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে ১২৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ডা. মোঃ রবিউল আওয়ালকে প্রধান করে (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. আবু সাইদ, ডা. সোহরাব হোসেন, ডা.নাজমা খাতুন ও ডা. শ্রাবন্তি। প্রাথমিকভাবে পানিবাহিত কারণে এ ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব সংকট মোকাবিলায় ২০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ২ হাজার স্যালাইন মজুদ রাখা হয়েছে।
পৌরসভা থেকে আক্রান্ত এলাকায় ৬টি টিম ঘটনা উদঘাটনসহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
গত মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে এসব এলাকা থেকে হাসপাতালে রোগী আসতে শুরু করে। গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাতলা পায়খানা, পেট ও মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে ১৪৭ জন রোগী ভর্তি হন।
এতে হঠাৎ করে এই বিপুল সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে ঠিকমতো ওষুধ ও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছিল না। এছাড়া ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবাও ব্যর্থ হচ্ছিল। ফলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন রোগীর স্বজনরা।
এদিকে খবর পেয়ে নাটোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) মোঃ রবিউল হক, পৌর কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার বাবুসহ অন্যান্যরা সদর হাসপাতালে ছুটে যান। পরে তারা রাতেই সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ ও স্যালাইনের ব্যবস্থা করে দেন। অপরদিকে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফিন, পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্টেট্র আসমা খাতুন সহ রোগীদের শারীরিক খোঁজ-খবর নেন এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ, ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনরা জানান, সংশিষ্ট এলাকায় পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ এবং ঘোলা রঙের পানি লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৫ দিন ধরে তারা এসব পানি পান করছেন। রাতে হঠাৎ করে নাটোর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা, ঘোড়াগাছা, উলুপুর, ডোমপাড়া ও কাঠালবাড়িয়া মহল্লার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষ রাতে আকস্মিকভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কোন কোন পরিবারের দুই থেকে তিনজন আবার কোন পরিবারের পাঁচজন একসঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তারা সকলেই পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা ও পেট ব্যথা নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ডায়রিয়ায় ৬৫ জন রোগী ভর্তি হন এবং দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৬, মহিলা ৫৫ এবং শিশু ২৬ জন রয়েছেন। এরই মধ্যে কিছু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ১২৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।
আরও পড়ুনস্থানীয় পৌরসভার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী, আনোয়ার হোসনসহ অনেকে জানিয়েছেন, শহরের ঝাউতলা, উলুপুর, আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, উত্তর চৌকিরপাড়সহ এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং অনেক স্থান নিচু, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। ড্রেনের সাথে আবার যুক্ত হয়েছে অনেক বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতি বর্ষাতেই এসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ফুলবাগান এলাকার সাজিদ মাহমুদ, ঝাউতলার শফিকুল ইসলাম জানান, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পানের পর থেকে তারা আক্রান্ত হন। শুধু তাই নয় চারিদিকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানির সমস্যার কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই পানির লাইন সংস্কার ও ট্যাঙ্কি পরিস্কারের দাবি জানান তারা।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহবুব হোসেন বলেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণ খোঁজা ও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়াসহ পানি ফুটিয়ে খাওয়ার তাদের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণও করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পানিবাহিত সমস্যার কারণে একসঙ্গে এতোজন আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীদের যাতে সেবা ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
নাটোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) মোঃ রবিউল হক জানান, সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়ার রোগীরা আদৌ পানিবাহিত সমস্যা নাকি অন্য কোন কারণে আক্রান্ত হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পৌরসভা থেকে বুধবার ওই এলাকায় পানির লাইন ও ট্যাঙ্কিতে কোন সমস্যা আছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি পৌর প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফিন বলেন, শহরের ঝাউতলা এলাকার কিছু ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত ৬৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এরপর দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ১৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এরমধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ জন। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছি, পানিবাহি থেকে এ ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়েছে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ মেডিসিন সরবারহ করা হবে। হাসপাতালে আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।
মন্তব্য করুন