ভিডিও রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাও: মোহাম্মদ আবু জাহের

সর্বকালের সর্বসেরা বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স:)

সর্বকালের সর্বসেরা বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স:)

যে মহামানবের সৃষ্টি না হলে সারা জাহান সৃষ্টি হতোনা, তিনিই সে জগতখ্যাত বিশ্ব নন্দিত নেতা, সর্দারে দু’আলম, সায়্যিদুল মুরসালিন, রহমাতুল্লিল আলামিন, খাতামুন্ নাবিয়্যিন, নবিকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ (স:)। কুরআন মাজিদের সূরা আ’রাফে মহান আল্লাহ বলেন, “আপনি বলুন, হে মানব মন্ডলি! অবশ্যই আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল। ”হযরত মুহাম্মদ আহম্মদ মোস্তফা (স:) প্রসিদ্ধ মতানুসারে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট, ১২ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার, আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রণ করেন এবং ৬৩২ খ্রিঃ ৭ই জুন, ১১ হিজরি ১২ই রবিউল আউয়াল ৬৩ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।

বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স:) এর শান ও মান এত ব্যাপক, তিনি এমনই এক মহামানব, যার জীবন বিস্তৃতি বিশালতা মহাসমুদ্রের চেয়েও বিস্তীর্ণ। যদিও ৬৩ বছরের এক সংক্ষিপ্ত জীবন নিয়ে ধরায় এসেছিলেন, কিন্তু এর গভীরতা ও ব্যাপকতা এবং বিস্তৃতি এত বেশী যে, সকল যুগের অগণন, অসংখ্য মানব এবং তাদের সকল শ্রেণি, গোষ্ঠী ও রুচির প্রয়োজন মেটাতে মহানবি (স:) এর একা জীবনই যথেষ্ট। নবিয়ে পাক (স:) এর জীবনের এক একটি মুহূর্ত লক্ষ লক্ষ জীবনের সমন্বয়। কোন শিল্পির তুলিতে তাকে তুলে ধরা অথবা লিখনির আঁচড় দিয়ে তাকে লিপিবদ্ধ করা এক দুরূহ ব্যাপার। মানব ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। মানুষের জ্ঞানের দিগন্ত যতই প্রসারিত হচ্ছে, বিশ্ব নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স:) এর প্রয়োজন, সিরাত, আলোচনা ততই বেড়ে চলছে। তাইতো আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে বলেন, “ আমি আপনার আলোচনার দিগন্তকে ú্রসারিত করেছি,”(সূরা আল ইনশিরাহ)।

আমাদের প্রাণপ্রিয় নবি (স:) এ ধরায় আগমন করেছিলেন, পথহারা, দিশেহারা, লক্ষ্যভ্রষ্ট ও বিপর্যস্ত মানব কাফেলাকে বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করে এক সরল, সঠিক ও সুনিপুণ জীবন পথের সন্ধান দিতে। তিনি এসেছিলেন, অন্ধকারের কুহেলিকায় নিমজ্জিত মানব গোষ্ঠিকে একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মতাদর্শের প্রতি দিক নির্দেশনা প্রদান করতে। পবিত্র কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে, “ তিনি ওই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে সঠিক পথ ও সত্য জীবন বিধান সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে সকল বিধনের উপর এটিকে প্রাধান্য দিতে পারে,” (সূরা সফ)। মহানবি (স:) এর জীবনের সবকিছুই মানব মন্ডলির জন্য আদর্শ। তাঁর প্রতিটি বুলি,আচার আচরণ, পদক্ষেপ, ছোট থেকে বড়, ব্যক্তি থেকে সমষ্টি, নখ কাটা, চুল ছাঁটা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সবকিছুই একই আদর্শের অন্তর্ভুক্ত।

একমাত্র মুহাম্মদ (স:) ছাড়া পৃথিবীর জন্য আর কোন মহামানব এমন নেই, যার জীবনের প্রত্যেকটি শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রতিটি অঙ্গের নড়াচড়া, প্রতিটি পদক্ষেপ জীবনের জন্য আদর্শ হতে পারে। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সাধাসিধে, মার্জিত, সুসজ্জিত ও রুচিশীল আদর্শবান সুদর্শন এক মহাপূরুষ। পরিবারে এক সহনশীল আদর্শিক স্বামী, স্নেহপরায়ন এক পিতা, সুখে দু:খে অংশগ্রহণকারী সৎ এক প্রতিবেশী। তিনি ছিলেন ইনসাফগার, ন্যায়বিচারক, কঠিন পরিস্থিতিতেও দৃঢ়চেতা, সাহসি সেনাপতি, দৈন্যতা ও প্রাচুর্য্যে সমভাবে উদার দানশীল। পূরুষ হয়ে ও নারী অধীকারে ছিলেন খুবই সোচ্ছার। মহানবির আবির্ভাবের পূর্বে নারী জাতি ছিল চরম অবহেলিত ও অধ:পতিত।

একমাত্র মহানবি (স:) এর আনিত জীবন বিধানই প্রমাণ করেছে, সৃষ্টিগত, মর্যাদা ও অধিকারের দিক দিয়ে পুরুষ ও নারীর অধিকার সমভাবে সমুন্নবিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও নারী থেকে, ”(সূরা আল হুজরাত)। নারীর অধিকার ও সম্মানবোধ ব্যক্ত করতে গিয়ে মহানবি (স:) বলেন, “তোমরা স্ত্রী লোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করে চলবে।” তিনি আরো বলেন,“ মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।” মহানবি (স:) এর এমন অজস্র আরো বাণী রয়েছে, যা নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।

সত্যপ্রচার ও প্রসারে তিনি ছিলেন আপসহীন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, “আমার এক হাতে চন্দ্র আর অন্য হাতে সূর্য এনে দিলেও সত্য প্রচার থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হব না।” তিনিতো সেই মহামানব, যিনি চির শত্রু কর্তৃক ভূষিত হয়েছিলেন, “আল আমিন” বা, চরম সত্যবাদী। উদারতা, সহনশীলতা, সৌহার্দ, সম্প্রীতি, ভালোবাসা, অপরের ব্যথায় নিজে ব্যথিত হওয়া, দুশমনকে অকপটে বুকে টেনে নেওয়া, মুখভরে হাসি দিয়ে দুশমনের নির্যাতন ভুলে যাওয়া, শত্রুকে আপন করে নেওয়া ইত্যাদি ছিল তাঁর অম্লান চরিত্রের আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য।

মক্কা বিজয়ের কালে স্বগোত্রীয় দুশমনদেরকে হাতের নাগালে পেয়ে, শাস্তি দেওয়ার অকুতোভয় সুযোগ থাকা সত্তে ও মহাসাগরের চেয়ে মহান ভলোবাসা বুকে ধারণ করে করুণার হাতছানি দিয়ে, রহমতের কান্ডারি হয়ে তিনি ঘোষণা দিলেন,“ আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, তোমরা সবাই নিরাপদ, তোমরা মুক্ত।” যে দুশমন কষ্ট দেওয়ার জন্য মহানবির চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো। রহমাতুল্লিল আলামিন যখন শুনলেন, সে বুড়ি আজ অসুস্থ। তাঁর কোমল হৃদয়টা যেন ফেটে চৌচির হয়ে গেল, দু:খ, কষ্টে যেন তাঁর মন ছেয়ে গেল। ছুটে গেলেন সেই বুড়ির পানে। বুড়িকে সেবা সুশ্রƒষা করে সুস্থ করে তুললেন। ধরার পৃষ্ঠে এযে এক রহমতের মূর্ত প্রতীক। তাইতো মহান আল্লাহ তাঁর হাবিবের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “আমি আপনাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছি” (সূরা আল আম্বিয়া)।

আরও পড়ুন

হযরত মুহাম্মদ (স:) সকল জাতি গোষ্ঠির নবি। সকলেই তাঁর নবুয়্যত সাম্রাজ্যের অধিবাসী। তিনি ধনী, গরিব, সাদা, কালো, আরব, অনারব, বংশ গৌরবের বৈষম্যের মূলে চরম কুঠারাঘাত করে তাগুত শক্তিকে ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন এক ইলাহর (আল্লাহর) পতাকা। যার ছায়াতলে সকলে নিরাপদ, সকলেই সমান অধিকার প্রাপ্য। বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবির ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। মদিনায় বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে নিয়ে গঠন করেন ইতিহাসের সর্বপ্রথম সংবিধান “মদিনা সনদ”। যার মাধ্যমে দীর্ঘকালের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের চির অবসান ঘটেছিল।

সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতি, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকার। যে সনদের কাছে বহুল প্রত্যাশিত আজকের মানবাধিকার সংস্থা চির ঋণী। মুহাম্মদ (স:) বিশেষ কোন দলের, জাতির, গোষ্ঠীর একক নন; বরং তিনি বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন। আল্লাহ বলেন,“(হে নবি) বলুন, হে মানব মন্ডলি! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসুল হয়ে এসেছি,” (সূরা আল আ‘রাফ)। তিনি হলেন সার্বজনীন ও অনুপম আদর্শের অধিকারী। যাকে বিশ্ববাসীর জন্য “মডেল” করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সূরা আল আহযাবে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেন, “আল্লাহর রাসূলের মহান জীবনাদর্শে রয়েছে সকল মানবের জন্য সর্বকালের সর্বোত্তম আদর্শ,।” মহানবি (স:) তো এমন এক ব্যক্তিত্ব; অপূর্ণতা যার জীবনকে কখনো স্পর্শ করেনি। আপনজনেরা অতি নিকট থেকে, লক্ষ সাহাবি অতি সতর্কতার সাথে, দশমনেরা চরম সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে যার জীবনকে তন্ন তন্ন করে দেখেছে, দেড় হাজারের অধিক বছর ধরে অনুসন্ধান চলার পরও আখলাকে মুহাম্মাদির ওপর আজ পর্যন্ত কোন কালো দাগের আঁচর কেউ দিতে পারেনি। এমনকি কস্মিনকালেও তা আর সম্ভব নয়।

কারণ, তাঁর সুমহান চরিত্রের সার্টিফাই করেছেন স¦য়ং আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত” (সূরা আল ক্বলম)। তাই আমরা যারা মুহাম্মদ (স:) কে রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছি, আমাদের দায়িত্ব আজ সর্বাধিক। আমাদের জীবনকে রাঙাতে হবে নবি চরিত্রের রঙে। আর মানবতার কর্ণকূহরে পৌঁছে দিতে হবে, মহানবির বিদায় হজের সেই অমীয় বাণী,“ “আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যতদিন এ দু’টি বস্তু আঁকড়িয়ে ধরবে, ততোদিন তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না, আর তাহলো, আল্লাহর কিতাব(আল কুরআন) ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ (আল হাদিস)।” পরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান সমস্যাকুল বিশ্বে যেখানে মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, যেখানে সন্ত্রাসের রাজত্ব, দেশে দেশে হানাহানি, খুন খারাপি, যুদ্ধ বিগ্রহ, নিরীহ লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি, রক্ত ঝরছে অজস্র মানবের, যেখানে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ চরমভাবে বিনষ্ট, সহ্য করা হচ্ছেনা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতপার্থক্য, আচার আচরণের ভিন্নতা। সে পরিস্থিতিতে সেখানে রাসুল (স:) এর অনুপম আদর্শ ও সর্বজনীন শিক্ষার অনুসরণই সমগ্র বিশ্বের জটিল গিট খুলতে এবং বহুল প্রত্যাশিত শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। পরিশেষে প্রত্যাশা করি, মহানবি (স:) এর আদর্শ আমাদের জিন্দেগীর একমাত্র আদর্শ হোক। তাহলে সফলতা নিশ্চিত। মহান আল্লাহ আমাদের প্রত্যাশা কবুল করুন। আমিন।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
সিনিয়র শিক্ষক, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ।
খতিব, মদিনা মসজিদ, কলেজ রোড, বগুড়া সদর।

mdjaher1977@gmail.com

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার কাহালুতে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

বগুড়ার সোনাতলায় পান দোকনীর কান কেটে দিলো মাদকাসক্ত যুবক

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

বগুড়া জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সালাম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পিয়াস গ্রেফতার

৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ

সাইয়্যেদুল মুরসালিন (সা.) এর জীবনাচরণ