ভিডিও সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তেলিপুকুরে আরেকজনকে খুন

তেল চুরির অপবাদ দেয়ায় বগুড়ায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ারকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, মূল ঘাতক গ্রেফতার

বগুড়ায় শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ারসহ পৃথক ঘটনায় দুইজন খুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরে একদিনের ব্যবধানে পৃথক ঘটনায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দু’জনকে খুন করা হয়েছে। নিহতরা হলেন দত্তবাড়ী শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার  ইকবাল হোসেন (২৬) ও সিলিমপুর দক্ষিণপাড়ার শাকিল খন্দকার (৪০)। এর মধ্যে শাকিল হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে, ইকবাল হত্যার ঘটনায় জড়িত মূল নায়ক রতনকে গাজীপুরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বগুড়ার ইনচার্জ ইকবাল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গতরাত রাত ৮ টার দিকে তাকে ওই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রতন স্বীকার করে যে, শতাব্দী ফিলিং স্টেশনে তেল পাম্প থেকে তেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে রতন ইকবালকে হত্যা করে। রতন আরও স্বীকার করে যে, সে এবং ইকবাল রাতের শিফটে কাজ করতো।

ইকবাল পাম্প থেকে প্রতিদিনই তেল চুরি করে বিক্রি করতো। আর এই তেল চুরির করতে গিয়ে ইকবাল মালিকের কাছে ধরাও পড়েছিল। কিন্তু দোষ না করেও তেল চুরির অপবাদ তাকেই দিয়েছিল ইকবাল। মালিক তাকে ভুল বুঝেছিলেন। এ ঘটনায় পাম্পের মালিক তাকে চড় মেরেছিলেন। এতে সে অপমানিত হয়। আর এতেই তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সে ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে শনিবার রাতে ইকবালকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে পালিয়েছিল। ধৃত রতন শাজাহানপুরের নিশ্চিন্তপুরের চাঁন মিয়ার ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার রাতে ইকবাল ও রতন শহরের দত্তবাড়িস্থ শতাব্দী ফিলিং স্টেশনে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন। আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনের শিফটের কর্মচারীরা এসে ইকবালকে ফিলিং স্টেশনের অফিসের ক্যাশ টেবিলের ওপর রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

পরে তারা খবরটি শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের মালিককে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে এসে থানায় বিষয়টি জানান। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার পর যেকোন সময় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত ইকবাল সিরাজগঞ্জের পিপুলবাড়িয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে।

তবে ইকবাল শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ইকবালের সহকর্মী রতন পলাতক রয়েছে। তার বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ইকবালের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ইকবালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যাকান্ডের পর তার রক্তাক্ত মরদেহ ফিলিং স্টেশনের অফিসের কক্ষে টেবিলের উপরেই ছিল। ওই রাতে ইকবাল ও তার সহকর্মী রতন এক সাথেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু রতন পালিয়ে যায়। তবে ফিলিং স্টেশনের টাকাপয়সা খোয়া গেছে কি না এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আজ রোববার রাত ৮ টা পর্যন্ত থানায় এ ব্যাপারে কোন মামলা হয়নি। স্বজনরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, এর আগে শনিবার সকালে বগুড়া শহরের অদূরে তেলিপুকুর এলাকায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শাকিল খন্দকার( ৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তেলিপুকুর এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাগিনা তৌফিক ইসলাম গুরুতর আহত অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

আরও পড়ুন

নিহত শাকিল খন্দকার বগুড়া শহরের সিলিমপুর দক্ষিণপাড়ার এলাকার বাকিবুল্লাহ খন্দকারের ছেলে। নিহত শাকিলের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা বিপ্লব হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন। স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তেলিপুকুর এলাকায় বালু ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাকিল খন্দকারের সঙ্গে স্থানীয় শামিম ও পলাশের বিরোধ চলে আসছিল। গত শুক্রবার রাতে জমি কেনাবেচার পাওনা দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে শাকিলকে ডেকে নেয়া হয় তেলিপুকুর গ্যাসপাম্পের পেছনের এলাকায়।

সেখানে গেলে পলাশ ও শামিম ২০-৩০ জন সহযোগী নিয়ে প্রথমে শাকিলের ভাগিনা তৌফিককে মারধোর করে। মারপিটের একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাকিলকে কুপিয়ে চলে যায়। এতেই শাকিল নিহত হন।এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্তরা মব তৈরি করে উল্টো শাকিলের ছেলে জয় (২৮)-এর হাতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়।

পরে অবশ্য পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। স্বজনদের অভিযোগ ওই দিন রাতেই তারা শাকিলের সন্ধান পেতে পুলিশের শরণাপন্ন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে শনিবার সকালে তেলিপুকুরে ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। এ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিকেলে এলাকাবাসি মহা সড়কে বিক্ষোভ দেখায় এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। তবে কিছু সময় পর তারা সড়ক থেকে সরে যায়।

পুলিশ বলছে, ওই দিন সেখানে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫-৬ জন আহত হয়। এ ঘটনায় শাকিলের ছেলে আপন ও অপূর্বও আহত হয়েছেন। নিহতের ভাগিনা তৌফিক ইসলাম (৩২), বাবা রফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শাকিলের চাচাতো ভাই মিরাজ খন্দকার জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে শাকিলকে হত্যা করা হয়েছে। বগুড়ার সদর থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, শাকিল হত্যার ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ হত্যার ঘটনায় এজাহার নামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো, সিলিমপুর মধ্যপাড়ার নুর আলমের ছেলে নিলয় হোসেন (২২) ও একই এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে লাম হাসান রাতুল (২১)। গতকাল তাদের আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লালমনিরহাটে চিকিৎসকের মারধরে রোগী হাসপাতালে ভর্তি

বগুড়ার ধুনটে সরকারি জমি উদ্ধারে গিয়ে মবের শিকার ভূমি কর্মকর্তা

জরাজীর্ণ ঘরে সোনালী ব্যাংক তালোড়া শাখার কার্যক্রম চলছে

বগুড়ার শিবগঞ্জে ১৮ পিচ ইয়াবা ও হিরোইনসহ গ্রেফতার ৩

বগুড়ার কাহালুতে ভীমরুলের চাক পোড়াতে গিয়ে বাড়িতে আগুন

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগণনা সরাসরি দেখা যাবে এলইডি স্ক্রিনে