উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসুর ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা, ফল ঘোষণায় বিলম্ব

ঢাবি প্রতিনিধি : সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ফল ঘোষণা ঘিরে সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ ফল ঘোষণায় বিলম্ব। আজ মঙ্গলবার রাত ১টা পর্যন্ত ডাকসুর ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যায়লয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি, জামায়াত ও দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে নীলক্ষেত এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। শাহবাগ মোড়, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায়ও দুই দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে। এসব এলাকায় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বেশ থমথমে।
রাত আটটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, নির্বাচনের ফল ঘোষণা ঘিরে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাসুদ আলম আরও বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, সন্দেহ হলেই যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছেন পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে খন্ড খন্ড মিছিল করেছে ছাত্রদল। তাদের মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
শান্তিপূর্ণভাবে ডাকসুর ভোটগ্রহণ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি ও হল সংসদে ১৩ পদে ভোট দেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনি ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া প্রার্থীরাও আশা করেন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে এই নির্বাচন। ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনের আগের এমন সৌহার্দ্য যেন ফলাফল ঘোষণার পরও বজায় থাকে সেই প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
গত জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ডাকসুর গঠনতন্ত্র আংশিক সংশোধন করে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে। এরপর ১২ আগস্ট প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যার মধ্যে ৬২ জন নারী।
পদভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নারী প্রার্থীর মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে ১ জন, এবং এজিএস পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন ভোটারের মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০,৮৭৩ এবং ছাত্রী ১৮,৯০২ জন। বিকেল চারটার মধ্যে কেন্দ্রের সীমানায় থাকা ভোটাররাও ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ বুধবারের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
ফলাফলের অপেক্ষায় উৎসুক জনতার ভিড় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফলের জন্য রাজধানীর শাহবাগ এবং আশেপাশের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী এবং উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সরেজমিনে দুপুরের পর থেকেই ঢাবির প্রবেশমুখ ও আশপাশের এলাকায় উৎসুক জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আরও পড়ুনকেন এখানে ভিড় করেছে, এমন প্রশ্ন করলে তারা কোন উত্তর না দিয়েই চলে যান। কেউ কেউ আবার বলছেন নির্বাচনে কারা জয়ী হবে, সেটা দেখতে এসেছি, কিন্তু পুলিশ ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই এখানে অপেক্ষা করছি।
দীর্ঘ সময় উৎসুক জনতার কথাবার্তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা বেশিরভাগই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশপথে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আইডিকার্ড দেখে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।
টিএসসি কেন্দ্রে উত্তেজনা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারচুপি করছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্রার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা টিএসসিতে আসেন। তারা কেন্দ্রের ভোট গণনা দেখতে ভেতরে ঢুকতে চান।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। তখন তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘ভোট চোর ভোট চোর, শিবির ভোট চোর’, ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, মানবো না’। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, টিএসসি কেন্দ্রে ভোট গণনা দেখানোর এলইডি স্ক্রিনে ব্যালট বাক্স দেখানো হচ্ছে না। তাই তারা ভোট গণনা দেখতে ভেতরে যেতে চান। কিন্তু প্রশাসন তাদের ভেতরে যেতে দিতে বাধা দেয়।
স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী হাসিবুল বলেন, শিবিরে প্রার্থীদের ভোট গণনার সময় ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের সময় বাধা দেওয়া হয়। টিএসসির এলইডি স্ক্রিনে আমরা দীর্ঘ সময় ব্যালট বাক্স দেখছি না। শিবিরকে জেতানোর জন্য ব্যালট বাক্স লুকানো ও কারচুপি করা হচ্ছে।
পরে দীর্ঘ আধাঘণ্টা অবস্থানের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রশাসন তাদের ভেতরে প্রবেশের জন্য গেট খুলে দেয়। তখন অবস্থানকারীরা তাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে চলে যান। পরবর্তীতে মিছিল করেন। টিএসসি থেকে বের হয়ে আবিদুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন তাদের কারচুপি লুকিয়ে আমাদের ভেতরে যেতে দিচ্ছে। তাই আমরা ভেতরে যাইনি। আমরা এই প্রহসনের নির্বাচন মানি না। এ ঘটনার পর থেকে টিএসসিতে এলইডি স্ক্রিন বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওনসহ বেশ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন মোনামীর সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। এই সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমানসহ একাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রশিবিরের পক্ষে বুথের একশ মিটারের মধ্যে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট সংবলিত লিফলেট বিলি করার সুযোগ দিলেও ছাত্রদলকে এমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন