ভিডিও

একশ’ গজ দূরেই সবজি’র দাম তিনগুণ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৯:৩৬ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৪, ১১:৪৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুর শহরের সবজি’র প্রধান পাইকারী বাজার ‘বাহাদুরবাজার গোলকুঠি’। এখান থেকে সবজি’র প্রধান খুচরা বাজার শহরের বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের দূরত্ব মাত্র ১শ’ গজ। এই ১শ’ গজ ফারাকের মধ্যেই কৃষকরা যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, হাতবদল হওয়া সেই একই সবজি ভোক্তারা কিনছেন দ্বিগুণ বা তিনগুন দামে।

এতে চরমভাবে ঠকছেন কৃষক ও ভোক্তারা। অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে এই অরাজক অবস্থা চললেও তেমন কার্যকর ভূমিকা নেই সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানালেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

আজ সোমবার (৫ফেব্রুয়ারি) বাহাদুরবাজার গোলকুঠিতে সবজির পাইকারী বাজারে গিয়ে দেখা যায় ১০ মণ ফুলকপি বিক্রি করতে এসেছেন দিনাজপুর সদর উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক মহসীন আলী।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমণ ফুলকপি বিক্রি করলেন ৪শ’ টাকা দরে। অর্থ্যাৎ প্রতিকেজি ১০ টাকা। সেই একই ফুলকপি সেখান থেকে ১শ’ গজ দূরে বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেটের খুচরা বাজারে ভোক্তারা কিনছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে।

ওই পাইকারী বাজারে ১১০ কেজি বেগুন বিক্রি করতে আসেন সদর উপজেলার শুভড়া গ্রামের কৃষক মো. নাসিক। প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি করেন ৩২ টাকা দরে। ওই একই বেগুন হাতবদল হয়ে বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।

বাহাদুর বাজার গোলকুঠি সবজির পাইকারী বাজারে আড়াই মণ শিম বিক্রি করতে আসেন সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান। অনেক দামাদামি করে প্রতিকেজি শিম বিক্রি করেন ৪৮ টাকা দরে। সেই একই শিম বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের খুচরা বাজারে ভোক্তারা কিনছেন প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।

সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি করেন ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা দরে। একই টমেটো খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কাছে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজি দরে।

সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক মহসীন আলী জানালেন, এখানে এসে আড়তদার ছাড়া আমাদের নিজ হাতে সবজি বিক্রি করার কোন উপায় নেই। আড়তদার ছাড়া হয় না বেচাকেনা। কিন্তু এই দামে সবজি বিক্রি করে আমাদের উৎপাদন খরচ ঠিকমতো উঠছে না। কিন্তু যারা কিনে খাচ্ছেন তাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। এতে আমাদেরও লোকসান, আর যারা কিনে খাচ্ছেন-তাদেরও লোকসান।

আক্ষেপ করে মহসীন আলী বললেন, আমাদের কৃষকদের ভাগ্যটাই এমন বেচতে গেলে দাম নেই, কিনতে গেলে দাম বেশি। এদিকে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে ১শ’ গজের মধ্যে এই অরাজক অবস্থা চললেও সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান তেমন নজরদারী নেই।

ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরা এবং বেশি দামে কিনছেন ভোক্তারা। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ে ঠকলেও লাভ গুনছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ ব্যাপারে দিনাজপুরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, আমরা বার বার কৃষকদের বলেছি-রশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি না করতে।

কিন্তু কৃষকরা রশিদ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছে বলে আমার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রমাণ পাচ্ছি না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, গত শনিবার আমিই নিজেই বাহাদুরবাজার গোলকুঠিতে পাইকারি সবজির বাজারে দাঁড়িয়ে থেকে কৃষকদের বিক্রিত পণ্যের রশিদ নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি। আর খুচরা বিক্রেতাদেরকেও আড়ৎ থেকে রশিদ নিতে বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে, শিঘ্রই আমরা সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো বলে আশা করছি। এদিকে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখীর কথা স্বীকার করে দিনাজপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম জানান, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে ভোক্তার কাছে দাম বেশি নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS