ভিডিও

নওগাঁর টেকঠার মাটি খুঁড়লেই মিলছে রত্ন সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের

হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: জুন ০৫, ২০২৪, ১১:১২ রাত
আপডেট: জুন ০৫, ২০২৪, ১১:১২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ডিএম রাশেদ, পোরশা (নওগাঁ) : নওগাঁর পোরশায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের পুনর্ভবা নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষা টেকঠা এলাকার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ লোপাট করছে স্থানীয় লোভী ব্যক্তিরা। এলাকাটি প্রত্নতত্ত্ব এলাকা ঘোষণা করে সংরক্ষণের দাবি করেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের টেকঠা নামক এলাকায় ১৩  থেকে ১৪ বছর আগে স্থানীয়রা একটি গর্ত থেকে কিছু মূল্যবান জিনিষপত্র পায়। এরপর থেকে ওই এলাকার যেখানেই মাটির গর্ত করে সেখানেই মূল্যবান জিনিষপত্র পায় স্থানীয়রা।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এসব মূল্যবান জিনিষপত্র পাওয়ার আশায় এখানকার মানুষ প্রতিদিন আবাদি জমি আমবাগানে খনন করে চলেছেন। টেকঠা এলাকা পুনর্ভবা নদীর পূর্বপাড়। নদীর পূর্ব পাড়ের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে গুপ্তধন পাওয়ার প্রতিযোগিতা।

কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক কিনে নিয়ে খনন করে চলেছেন। ১২ থেকে ১৪ বছর আগে এখানে কোন ঘরবাড়ি ছিল না। ছিল ফাঁকা মাঠ। এখন গুপ্তধন পাওয়ার আশায় অনেকেই বাড়ি করে থাকতে শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, এক যুগের বেশি আগে ঘটনাস্থল থেকে সর্বপ্রথম পশ্চিম রঘুনাথপুর জেলেপাড়ার বৃদ্ধ আব্দুল কাদের কয়েকটি ক্ষুদ্র পাথর  পেয়েছিলেন। পাথরের মাঝখানে ছোট ছিদ্র ছিল। পাথরগুলো দেখতে তসবির পাথরের মতো। তিনি পাথরগুলো পাওয়ার পর তসবি তৈরি করেন।

কয়েক মাস পর কোনো এক ব্যাক্তি ওই মসজিদে নামাজ পড়ে তসবিটি দেখে পছন্দ হয়েছে বলে বৃদ্ধ আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আব্দুল কাদের তা ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেন।

এরপর বৃদ্ধ আব্দুল কাদেরের মনে সন্দেহ হয় সেটি নিশ্চয়ই মূল্যবান পাথর। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন শুরু করেন মাটি খনন। সেই থেকে স্থানীয়রা যে যার মতো মাটি খনন করেই চলেছেন। আর পাচ্ছেন মূল্যবান সব জিনিসপত্র।

৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করলেই পাওয়া যায় পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এসব জিনিস লাল, কালো, সাদা, সবুজসহ একেকটির রঙ একেক রকম। এ সব মূল্যবান পাথরের জিনিস পেয়েই বিক্রি করে দেন স্থানীয়রা। সর্বনিম্ন দশ হাজার টাকা থেকে  সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে এখান থেকে পাওয়া মূল্যবান রত্ন।

স্থানীয় যুবক রবিউল ইসলাম জানান, তার বাড়ির পশ্চিমে পোরশা সদরের মৃত ওহাব শাহের জমি রয়েছে। তার কাছ থেকে তিন বছরের জন্য ২লাখ টাকার বিনিময়ে ৩বিঘা জমি  কিনেছেন তিনি। জমির মাটি খুঁড়ে মূল্যবান সব জিনিসপত্র উদ্ধার করার জন্য তিনি তা কিনেছেন। এর আগেও তিনি পোরশা সদরের এক জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে অনেক মূল্যবান সব জিনিষপত্র পেয়েছিলেন।

স্থানীয় এক যুবক জানান, তিনি এক বছরের জন্য ৩বিঘা জমি নিয়ে মাটি খনন করছেন। অল্প দিনে তিনি ঐ জমিতে মাটি গর্ত করে মূল্যবান ২টি চিরুনি পেয়েছেন যা ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ২টি জালি পেয়েছেন যা ১৮হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৩টি ফুটবল পেয়েছিলেন যা বিক্রি করেছেন ২৫হাজার টাকায় এবং কয়েকটি মার্বেল বোতামসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করেছেন ১২হাজার টাকায়।

তবে ৩ বিঘার মধ্যে এগুলো পেয়েছেন মাত্র ৫শতক জমির মধ্যে এত কিছু পেয়েছেন।  এদিকে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক একটি চিঠি দিয়েছিলেন পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঐ টেকঠা নামক স্থানের ক্ষতিসাধন রোধ করে অবৈধ প্রত্ন সম্পদ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেওয়া ঐ চিঠিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক আরও উল্লেখ করেছিলেন, পোরশা উপজেলার এই টেকঠা নামক এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এ প্রত্নস্থানকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ আদনান জানান, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। এ ব্যাপারে তিনি অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, টেকঠা এলাকা জনমানবহীন ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোকবল সংকটের কারণে পাহারার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

এটি দেখভালের জন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকা নিয়ে এখনো কোন গবেষণা করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS