ভিডিও

আবেগ-উচ্ছ্বাসমাখা বর্ণিল উৎসবে করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের পুনর্মিলনী

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ০৯:৩৫ রাত
আপডেট: জুন ২০, ২০২৪, ০১:১৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : ‘বন্ধু মানে বন্ধ আকাশ খুলে দেবার তাড়া, বন্ধু মানে মুখরিত গ্রহান্তরের পাড়া। বন্ধু মানে তুই আর আমি সবাই মিলে তুই, বন্ধু মানে ইচ্ছে হলেই পরশ পাথর ছুঁই।’ বন্ধুত্ব এমনই এক পরশপাথর যা  কখনো  পুরাতন হয়না । এমনই চিত্র দেখা গেল করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের রি-ইউনিয়নে দিনভর।

স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে  কলেজে ভর্তি। এরপর শহরের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কিম্বা চাকরিসূত্রে নয়তো বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি। কারও সাথে হয়তো স্কুলের পর সামনাসামনি দেখাও নেই। সবাই ব্যস্ত। এর মধ্যে ভার্চুয়ালী যোগাযোগ মাধ্যমে ইয়ার অনুযায়ী গ্রুপে টিকিয়ে রেখেছেন বন্ধুত্বকে। হাতে হাত ধরে কাঁধে কাঁধ রেখে একসাথে চলা হয়নি অনেককাল।

এমনই যখন অবস্থা তখন একদল স্বপ্ন পিপাসু তরুণদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় পুনর্মিলনী উদ্যাপন কমিটির আযোজনে আজ বুধবার (১৯ জুন) আবার সামনা-সামনি দেখা হলো বন্ধুর সাথে বন্ধুর, আগের সেই মিষ্টিমধুর দুষ্টুমিতে স্মৃতিচারণ হলো চিরচেনা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণেই।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী যে কটি স্কুল ও কলেজ আছে, তাদের একটি করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজ । ২০০০ সালে শহরের জলেশ্বরীতলায় ছোট্ট পরিসরে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত  হলেও  পরবর্তীতে  তা স্থানান্তরিত হয় জামিলনগর এলাকায়।

এরপর ২০১০ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মত একদম শুরু এবং চলতি বছরের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলনী। পুনর্মিলনীতে এসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই রঙিন স্কুলজীবনে।

তারা হাতে হাত ধরে নাচে-গানে বিদ্যালয়ের মাঠ ও ক্লাসরুমগুলোকে মুখরিত করে তোলেন এবং আড্ডায় কেটে যায় পুরো দিন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে একে একে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।

এরপর স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যান্ডের তালে তালে নিজ নিজ সহপাঠীদের সাথে নিয়ে নাচগানে মেতে ওঠে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে প্রাক্তনরা।

ফিরে এসে সেই স্কুলের সময়ের মত করেই অডিটোরিয়ামে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে স্মৃতিচারণ বন্দনায় মেতে ওঠেন। স্বাগত বক্তব্য দিয়ে স্মৃতিচারণ শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক আবু মুসা। এরপর মঞ্চে আসেন ২০১০ ব্যাচের জর্জিনা প্রীতি, ২০২১ ব্যাচের জয় পোদ্দার, ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মালিহা তাবাসসুম, ২০১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডাঃ তন্বী,  ২০১৬ ব্যাচের সুমনা, ২০১৯ সালের শিক্ষার্থী বর্তমানে টিএমএসএস মেডিকেলের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলাম, ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডাঃ তৃষা, ২০২০’র ব্যাচের বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির শিক্ষার্থী অঙ্গন, ২০১৮’র ব্যাটের বর্তমানে  খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে অধ্যয়রনরত মমতাহিনা, ২০১৪’র  সাদী।

প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকারের সভাপতিত্বে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন   চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাহী সদস্য দৈনিক করতোয়া’র নির্বাহী সম্পাদক তাসলিমা হক রাকা।

প্রধান অতিথি বলেন, ‘একটি বিদ্যাপিঠ শিক্ষার্থীদের সারাজীবনের জন্য একটা ভালমানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। আমরাও সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে জীবনে সাফল্য অর্জন করা দেখে গর্ব হচ্ছে। তিনি শিক্ষার্থীদের  উদ্দেশে আরও বলেন শুধু শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষিত হলেই চলবে না, দেশের জন্য, পরিবারের জন্য ভাল কিছু করতে হবে। তবেই হবে শিক্ষার এবং মানুষ হওয়ার সার্থকতা’।

স্কুলের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেধা, সুজানা, আলবীরা, জাহিন, অনিন্দ্য, সম্রাট, রাফিউল এবং তৃষা। এদের মধ্যে আছেন ডাক্তার, আর্মির ক্যাপ্টেন, ব্যাবসায়ী, শিক্ষক, ফ্যাশন ডিজাইনার এবং গৃহিনী। তারা প্রথমেই সবাই মিলে ক্লাসরুমে যান। বেঞ্চে বসে সেই শিশু বয়সের মত করে খুনসুটিতে মেতে ওঠেন।

স্কুলে ঢুকে প্রথমেই তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর সেই সময় কে কোন স্যারের কাছ থেকে বকা খেয়েছেন, বিদ্যালয়ে কে কাকে কী নামে ডাকতো,  কী কী দুষ্টুমিতে সময় গড়িয়ে যেত, কিভাবে ঝগড়া করে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতো সব বিষয়ে কে কার আগে বলবে সেই প্রতিযোগিতা তখনও চলছিল।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গঠিত পুনর্মিলনী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক নিসারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সার্জিল হোসেন বলেন, সব স্কুলে অ্যালামনাই এসোসিয়েশন আছে। এর মাধ্যমে নতুন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে সেই সুযোগ ছিল না। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী এখন দেশের বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত আছে। অন্যদিকে নতুনরা যখন  সেইসব প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে যায় তখন কোন সহযোগিতা পায় না।

এসব কারণে নতুন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে  নতুন এবং প্রাক্তনদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে সেই সাথে তাদের বিপদে আপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় এই সংগঠনের কাজ হবে।

প্রাণের এই বিদ্যাপীঠকে আন্তজার্তিক পর্যায়ে পরিচিত করে তোলাও যাবে এর মাধ্যমে।’ সকাল ১০ টায় বিদ্যালয় মাঠে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টি-শার্ট পড়ে ও সকালের নাশতা খান।

দিনের শেষভাগে ২য় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাক্তন-নতুনরা একসাথে গানে গানে, নেচে ও বিভিন্ন  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় স্বরব্যাঞ্জো ব্যান্ড দল ও মেটাল লিড দ্যা ব্যান্ড।

সারাদিন হৈ-হল্লোর শেষে এই শুভক্ষণে সবাই প্রতিজ্ঞা করেন তাদের মত সব পৃথিবীর সব বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। ভাল থাকুক সব বন্ধুরা। শৈশবের সেই দুরন্তপনা, উচ্ছ্বলতার  বন্ধু, রঙিন চশমায় দেখা বন্ধু, তোদের মিস করবো ভীষণ.... বলে  ফিরে যান যার কর্মস্থলে, বাড়িতে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS