ভিডিও

মানববন্ধনে লালন ভক্ত চায়না বেগম ‘আমাকে যদি সাপে-বাঘে খায়, তবু কোথাও যাব না’

প্রকাশিত: জুলাই ০২, ২০২৪, ০৯:২০ রাত
আপডেট: জুলাই ০৩, ২০২৪, ১২:১৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ‘ যেখানে আমার স্বামীর মাজার আছে, আমি সেখানেই থাকব। আমাকে যদি স্বামীর কবর থেকে সাপে খায়, বাঘে খায় তবুও আমি ওই জায়গায় থাকব। মাটিতে মিশে যাব। আমাকে কবর দিতে কাউকে আসা লাগবে না। তবু কোথাও যাবনা।’ 

মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মানববন্ধনে কথাগুলো বলছিলেন ৮০ বছর বয়সী লালন ভক্ত চায়না বেগম।


দুপুরে উপজেলার ছেঁউরিয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজারের প্রধান প্রবেশপথের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেন লালন ভক্ত অনুসারীরা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি এবং পুনরায় একই স্থানে চায়নার ঘর নির্মাণের দাবি জানান।
প্রায় ঘণ্টা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে চায়না বেগম আরও বলেন, ‘সকাল হলে আমি ভিক্ষা করতে যাব। সারাদিন বেড়াব। দিন শেষে স্বামীর ভিটায় রাঁধে (রান্না) খাব। তবু স্বামীর ভিটা ছেড়ে কোথাও যাবনা। আমার ঘর যেভাবে ছিল। আপনারা যেভাবেই করে দেন।’


লালন ভক্ত চায়না বেগম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা এলাকার মৃত গাজির উদ্দিনের স্ত্রী। গত ২৬ জুন সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যা ও মাতব্বররা তার ঘর ভাঙচুর করেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। 
মানববন্ধনে তার বোন ফকির আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বোন যেখানে যেভাবে ছিল আপনারা সেখানে সেভাবেই বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন এবং যারা ঘর ভেঙেছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।’
লালন ভক্তের ঘরবাড়ি ভাঙচুরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফকির আলেক শাই। তিনি বলেন, দাঁড়ি রাখলে আর টুপি পড়লেই মুসলমান হওয়া যায়না। মানুষ হওয়া যায়না। মানুষ হতে হলে আগে মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।


জানা গেছে, চায়না বেগমের ইচ্ছে ছিল লালন অনুসারী মৃত স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবেন। ভিটেমাটিতে প্রতিদিন জ্বালাবেন সন্ধ্যা প্রদীপ। নিজে লালন অনুসারী হওয়ায় স্বামীর কবরের পাশেই নিজ জমিতে তুলেছিলেন টিনের চালার ঘর। কিন্তু বাদ সাধলেন এলাকার মেম্বার ও মাতবররা। ভবিষ্যতে ওই স্থানে মাজার, মাদকসেবন ও কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাখানা হতে পারে এমন অভিযোগ তুলে ২৬ জুন সকালে স্থানীয় আরও কয়েকজনকে নিয়ে বৃদ্ধার ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। ভুক্তভোগী প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো লাঞ্ছিত হন। কোনো উপায় না পেরে চায়না বেগম অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া মডেল থানায়। তবে শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় উভয়পক্ষের বৈঠকে চায়না বেগমকে অন্য কোথাও একটি নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়া শর্তে অভিযোগ মীমাংসা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইচ্ছের বিরুদ্ধে মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চায়না বেগম। 
এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়না বেগম ও তার স্বামী মৃত গাজির উদ্দিন দুজনেই ছিলেন বাউল ফকির লালন সাঁইজির অনুসারী। মৃত্যুর পর গাজির উদ্দিনকে মাঠের মধ্যে নিজ জমিতে কবর দেওয়া হয়।  
কেন স্বামীর কবরের পাশে ঘর বানালেন চায়না বেগম


চায়না বেগম বলেন, ‘মৃত্যুর আগে স্বামী বলে গেছেন, কোথাও জায়গা না হলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতিবছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। তার কথা রাখতেই ঘরখানা তৈয়ার করি।’ 
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ওই বৃদ্ধা বাড়ি করেছেন একটি মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। সেখানে যাওয়ার পথ নেই, তাকে দেখারও কেউ নেই। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা হওয়ার আশঙ্কায় তার ঘরটি এলাকাবাসী ভেঙে দিয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS