নদীতে পলি জমায় কমছে পানির ধারণক্ষমতা
রংপুর জেলা প্রতিনিধি : প্রতিবছর সময়-অসময়ের বন্যায় পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে তিস্তা নদীর। উজানের পলিতে ভরাট হয়েছে নদীর বুক। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রতিবছর দুই কোটি টনের বেশি পলি আনছে তিস্তা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হলে গজলডোবা বাঁধের সব জলকপাট খুলে দেয় ভারত। এতে করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় জেলায় বন্যা দেখা দেয়। বন্যার ঘোলাটে পানির স্রোত ধেয়ে আসতে থাকে ভাটির দিকে।
এর সাথে বিপুল পরিমাণ পলি আসায় তিস্তা নদীর বুক ভরাট হয়ে এসেছে। পলিতে নদীর বুক উঁচু হওয়ায় স্বল্প পানিতেই নদী টইটম্বুর হয়। তিস্তার বুক পলিতে ভরে যাওয়ায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা পরিবর্তন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পূর্বে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ছিল ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। গত জুন মাসে এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫৬ সেন্টিমিটার বাড়িয়ে ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
নদী গবেষক ও উন্নয়ন বিশ্লেষকরা বলছেন, নদীকেন্দ্রিক কৃষি জমি রক্ষা, ভাঙন রোধসহ চরগুলো রক্ষায় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি তিস্তা নদীর সুরক্ষার বিষয়টিও এখন জরুরি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর তিস্তা নদী দুই কোটি টন পলি বয়ে আনে। গত বছর অক্টোবরে ভারতে বাঁধ ধসের কারণে বিপুল পরিমাণ পলি এসেছে। ফলে তিস্তা নদীর বুক উঁচু হয়েছে।
নদী রক্ষা বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নদী হয়ে ওঠার কথা ছিল উত্তরের জীবনরেখা, সেটা হয়ে উঠেছে অভিশাপ। নদীকে যদি আমরা অভিশাপের হাত থেকে আশীর্বাদে পরিণত করতে চাই, তাহলে এ তিস্তা নদীর সুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, বন্যা ও নদীভাঙনের ভয়াবহতায় এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হুমকির মুখে। খরাকালে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখে ভারত।
আবার একটু পানি বেশি হলেই বাংলাদেশকে কিছু না জানিয়ে গজলডোবা ভাসাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষদের। নদীভাঙনে বাড়ছে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা, বাড়ছে রংপুর বিভাগে গড় দারিদ্র্যের হার। তিস্তা বাঁচাতে শুধু আশ্বাস নয় চুক্তির মাধ্যমে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।