নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যাশা নতুন ভিসি’র

নবির উদ্দিন, নওগাঁ : নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন পাওয়ার প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালে নওগাঁয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন লাভ করে। কিন্ত এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের সাইট সিলেকশন হয়নি। কোন প্রকল্প পাস হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণের ডিপিপি পর্যন্ত দাখিল করা হয়।
নওগাঁ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের উত্তর পাশে নওগাঁ মডেল টাউনে একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ভাইস চান্সেলরের অফিসে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও ১২ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন দাপ্তরিক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করছেন। এরই মধ্যে প্রফেসর ড. মোহাঃ হাছানাত আলী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইবি বিভাগ থেকে এই পদে যোগদান করেন।
ড. মোহাঃ হাছানাত কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ১৯৯১ সালে অনার্স এবং ১৯৯২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাকাউন্টিং বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইবি বিভাগে এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তিনি নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেই অনুভব করেন যে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করাই অন্যতম প্রধান কাজ। যোগদান করেই সেই কাজের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে ইউজিসি, সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নওগাঁবাসীকে সাথে নিয়ে তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই অবহেলিত জনপদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত করা প্রয়োজন। আর তাই তিনি যোগদান করেই এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য ইউজিসি বরাবর আবেদন করেছেন।
সাইট সিলেকশন, প্রকল্প অনুমোদন, ডিপিপি দাখিলসহ প্রত্যেকটি কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে তিনি জানান, একই সাথে অনুমোদন লাভ করা হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অথচ অজানা কারণে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুই হয়নি। বঞ্চিত হয়েছে সব কিছু থেকে।
আরও পড়ুনতিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শরু করবেন। সেই লক্ষে যা করার তাই করবেন তিনি। নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম একইভাবে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ প্রকাশ প্রয়োজন।
বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ সাইট সিলেকশনের কাজগুলো সমাধান হবে। তিনি প্রত্যাশা করেন আগামী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পাবে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান মনে করেন এখন সবচেয়ে এবং সবার আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। প্রয়োজন হলে কোন প্রাইভেট বাড়ি ভাড়া নিয়ে হলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। নওগাঁ একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জেলা। এ জেলায় প্রচুর স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আউয়াল বলেছেন, নওগাঁয় বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হয়ে এখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হবে।
নওগাঁ’র মানুষের সভ্যতা সংস্কৃতি স্মার্টলি এগিয়ে যাবে। তিনি মনে করেন সর্বপ্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। প্রয়োজন হলে কোন ভাড়া বাড়িতে হলেও স্বল্প পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া প্রয়োজন। প্রস্তাব পেলে দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
মন্তব্য করুন