মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শুধু মাদকের জন্য অনেক দেশ কিংবা অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। মাদকের বিস্তৃতির কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি ধবংসপ্রায়, আইন-শৃঙখলা পরিস্থিতি শোচনীয় খুনাখুনি নৈমিত্তিক ঘটনা।
অর্থাৎ সমাজে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে পৌঁছে যেতে পারে। সংগত কারণেই বাংলাদেশে মাদকের বিস্তৃতি দেখে সচেতন মহল থেকে এমনই নানা আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান। এই অভিযান সবসময় চলমান। এই অভিযানে বহু মাদক বিক্রেতা কিংবা বাহক ধরা পড়েছে। বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু মূল হোতারা গ্রেপ্তার হয়েছে সে তুলনায় অনেক কম। এর জন্য অনেকেই আইনের কিছু দুর্বলতাকে দায়ী করছিলেন। সেটা ঠিক করতে এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮ পাস হয়েছে। এতে মাদক পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্থলগ্নিকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু শুধু কঠোর আইন কি মাদক দ্রব্যের বাড়াবাড়ি কমাতে পারবে-এ প্রশ্ন অনেকেরই।
কারণ, বিগত দেড় দশক রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এইসব মাদক ব্যবসা প্রচলিত হয়। তাদের দলীয় লোকজনই মাদক ব্যবসার প্রধান হোতা। পর্দার আড়াল থেকে এসব রাজনৈতিক গডফাদার মাদক ব্যবসা চালিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও ‘গডফাদাররা’ কখনও ধরা পড়ে না। বিশেষজ্ঞদের মত, শুধু আইন প্রণয়ন নয়, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বিগত শাসনামলে দেখা গেছে, মাদক কারবারি ধরা পড়লেও অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পেয়ে যেতো, বছরের পর বছর মাদক মামলা ঝুলে থাকে, আসামিরা দ্রুততম সময়ে জামিন পেয়ে যেত, দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে অনেক আসামি ছাড়াও পেয়ে যেত।
আমাদের দেশে চোরাপথে মাদক আসে ভারত ও মায়ানমার থেকে। ভারতের সীমান্তে একাধিক স্থানে গোপন ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছে-যেখান থেকে শুধু বাংলাদেশে এই মাদক সরবরাহ করা হয়। মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, এলএসডি, গাঁজা, চরস, আফিম, ভাংসহ নানা ধরনের বিদেশি মাদক দ্রব্য চোরাপথে এসে থাকে। কখনও ধরা পড়ে, কখনও ধরা পড়ে না।
আরও পড়ুনসম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরে দেখা গেল ফুটবলের ভেতর থেকে দুই কেজি হেরোইন ‘উদ্ধার’ শীর্ষক একটি সংবাদ। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিনব কায়দায় ফুটবলের ভেতরে রাখা ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৫ এর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবির। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার স্বরমোংলা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে হেরোইনের এই চালানটি উদ্ধার করা হয়। কর্নেল ফিরোজ গণমাধ্যমকে জানান, সীমান্তবর্তী এলাকা গোদাগাড়ী হয়ে রাজশাহীতে মাদক প্রবেশ করে।
শনিবার রাতে র্যাবের টহলের সময় মাদক কারবারিরা ফুটবলটি ফেলে পালিয়ে যায়। সন্দেহ হলে ফুটবলটি তল্লাশি করে এর ভেতর থেকে ২১টি প্যাকেটে মোট ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়। উদ্ধারকৃত মালামাল জিডির মাধ্যমে গোদাগাড়ী থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে সর্বতো প্রয়াস চালাতে হবে কালবিলম্ব না করে, একই সঙ্গে জোরদার করতে হবে সামাজিক আন্দোলন, সরকার, প্রশাসন এবং সামাজিক শক্তিকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে এই অবক্ষয় ঠেকাতে। দায়িত্বশীল প্রত্যেকটি সংস্থা ও বিভাগের তরফে চালাতে হবে সাঁড়াশি অভিযান।
মাদকের উৎস খুঁজে বের করে মাদক ব্যবসায়ী তথা মূল হোতাদের চিহ্নিত করে সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে তাদের কঠোর দন্ডের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন