ভিডিও বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

প্যাগান দেবতা হুবাল

সংগৃহীত, প্যাগান দেবতা হুবাল

হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জন্মেরও প্রায় চারশো বছর আগে আমর বিন লুহাই নামে হিজাজের একজন রাজা ছিলেন যিনি ক্বাবার ছাদে হুবাল নামে এক মূর্তি স্থাপন করেন। এটি কুরাইশদের অন্যতম প্রধান দেবতা ছিল‎‎। বলা হয়ে থাকে- ক্বাবা এবং তার আশেপাশে মোট ৩৬০টি মূর্তি ছিল, এবং প্রতিটি গোত্রের নিজস্ব দেবতা ছিল। মূর্তিগুলোর আকার-আকৃতি উপাসকদের কল্পনানুসারে তৈরি করা হয়েছিল। ‎‎হুবাল ছাড়াও ক্বাবার ছাদে শামস নামে আরও একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল‎‎। মক্কায় তীর্থযাত্রীদের সাথে আনা কুরবানির পশুদের রক্ত ক্বাবায় থাকা দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ করা হতো, এবং কখনও কখনও এমনকি মানুষকেও বলি দেওয়া হতো। এসব কিছু সৃষ্টিকর্তার কাছে উৎসর্গ করা হতো। মূর্তিপূজার পাশাপাশি তারা সূর্য ও চন্দ্রেরও উপাসনা করতো।

মক্কার পৌত্তলিক আরবরা ক্বাবাতে হুবাল নামে এক চন্দ্র দেবতার উপাসনা করতো। ক্বাবাতে থাকা ৩৬০ দেবতার মূর্তির মধ্যে হুবাল ছিল সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত। কাবা শরীফের হুবালের একটি ছবিকে পূজা করা হতো। কারেন আর্মস্ট্রংয়ের মতানুসারে, উপাসনাগৃহটি হুবালের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ছিলো এবং কাবা শরীফে রক্ষিত ৩৬০ টি মূর্তির মধ্যে হুবালকে প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো।

হিশাম ইবনে আল কালবি কিতাব আল আশনামে বর্ণিত আছে, হুবালের মূর্তির ছবিটি মনুষ্যাকৃতির যার ডান হাত ভেঙে ফেলে সেখানে একটি সোনার হাত বসানো হয়েছে। প্রাক ইসলামি যুগের ভাষ্যকার আল আজরাকি বলেছেন যে কাবায় দান সামগ্রী রাখার জন্য একটা ভল্ট রাখা ছিলো। হুবালের উদ্দেশ্যে একশত উট বলি দেওয়া হতো। হিশাম আল কালবি এবং আল আজরাকি উভয়ই উল্লেখ করেছেন ছবির সামনে সাতটি তীর রাখা থাকতো। মৃত্যু, কুমারিত্ব এবং বিবাহের ক্ষেত্রে স্বর্গীয় সিদ্ধ্বান্ত পেতে এগুলো ব্যবহার করা হতো।

আল কালবির মতানুসারে হুবালের ছবিটি সর্বপ্রথম খুজাইমাহ ইবনে মুদরিকাহ ইবনে মুদার কর্তৃক স্থাপিত হয়। ইবনে ইসহাকের বর্ণনানুসারে, আমর ইবনে লুহাজ, কুয়াজা গোত্রের একজন দলপতি, কাবাগৃহে হুবালের ছবি স্থাপন করেন, যেখানে এটাকে সকল গোত্রের প্রধান দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো।  আমর উল্লিখিত সময় অনুসারে এটি চতুর্থ শতাব্দীতে সংঘটিত হয়েছিলো। কাবা শরীফের রক্ষণাবেক্ষণের ভার পরবর্তীতে কুরাইশগণ অর্জন করে।

আরও পড়ুন

ইবনে আল ক্বলবি কর্তৃক বর্ণিত আছে যে মুহাম্মাদের পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব তার দশ সন্তানের একজনকে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার প্রতীজ্ঞা করেন। তিনি হুবালের সামনে সংরক্ষিত তীরের সাহায্যে সিদ্ধান্ত নিতে চান কোন সন্তানকে উৎসর্গ করবেন। তীর মুহাম্মাদের পিতা, আব্দুল্লাহ এর দিকে নির্দেশ করে। যদিও পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ এর পরিবর্তে ১০০ উট বলি দেওয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনে জরীর আল তাবারির বর্ণনাসুসারে শিশু মুহাম্মাদ কে আব্দুল মুত্তালিব হুবালের মূর্তির সামনে নিয়ে গেছিলেন।

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে কুরাইশ বাহিনীর নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব পরবর্তী যুদ্ধে জয়লাভের জন্য হুবালের নিকট প্রার্থনা করেন, "হুবাল, তুমি তোমার ক্ষমতা দেখাও"। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ মক্কা বিজয়ের পরে কাবা শরীফ থেকে হুবাল সহ ৩৬০ টি মূর্তি সরিয়ে ফেলেন এবং প্রার্থনাগৃহটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূনরায় উৎসর্গ করেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়া শেরপুরে ধর্ষণের অভিযোগে দুই কিশোর গ্রেপ্তার

চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা চান ড. ইউনূস

ঢাবি ছাত্রশিবিরের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা

বগুড়ার শেরপুরে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারছেননা বিদেশ ফেরত জাহিদুল

বগুড়ার আদমদীঘিতে পুকুরে বিষ প্রয়োগে সাড়ে তিন লাখ টাকার মাছ বিনষ্ট

দাউদকান্দিতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২