মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই পিঁড়িতে চুল কাটছেন মোহাসিন নাপিত
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মানুষের বাড়ি গিয়ে পিঁড়িতে বসে চুল কাটছেন বগুড়া সারিয়াকান্দির নাপিত মোহাসিন মিয়া (৭৫)। তার মত অনেক নাপিতই একইভাবে কাজ করেন। এখনো সারিয়াকান্দির হাট বাজারে দেখে মেলে এভাবে চুল কাটার দৃশ্য। নির্দিষ্ট কোনও জায়গা না পাওয়ায় নর্দমার পাশে হয়েছে তাদের বসার স্থান।
সারাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই পিঁড়িতে বসে চুল দাঁড়ি কাটার দৃশ্য বিরাজমান ছিল। গত কয়েকবছর ধরেই এ দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। দেশজুড়ে এখন নামি দামি সেলুন রয়েছে। তবে সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে এখনো চোখে পড়ে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য। সারিয়াকান্দি পৌর বাজারের একটি নর্দমার পাশে পিঁড়িতে বসে একমনে চুল কাটছেন এবং খুর কাঁচি চালাচ্ছেন বৃদ্ধ মোহসীন। তিনি উপজেলার নারচী ইউনিয়নের মৃত ওমর মোল্লার ছেলে।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে থেকেই তিনি মানুষের বাড়িতে গিয়ে পিঁড়িতে বসে চুল কাটছেন। তখন তিনি ৪ আনা থেকে শুরু করে ৮ আনা পর্যন্ত চুল কেটেছেন। তার অনেক পরে ১ টাকায় চুল কেটেছেন। তবে এখন তিনি উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে চুল কাটছেন। এখন প্রতিজনের চুল কাটা ৩০ টাকা এবং দাঁড়িকাটা ১৫ টাকা করে নিচ্ছেন।
পিঁড়িতে বসে চুল কেটেই তিনি তার ৫ ছেলেকে লালন পালন করেছেন। তার ছেলেরা কেউ কৃষিকাজ করেন, আবার কেউ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালান। একমাত্র মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন এ পেশার রোজগার থেকে। তবে তার সন্তানদের এ পেশায় তিনি আসতে দেননি। মোহাসিনের মতো এ বাজারে আবু বক্কর সিদ্দিক, জুয়েল মিয়াসহ আরও কয়েকজন চুল কাটেন পিঁড়িতে। তাদের তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় পিঁড়িতে বসে চুল কাটা নরসুন্দরের সংখ্যা ২০ জনের বেশি।
আরও পড়ুনমোহাসিন বলেন, যুদ্ধের আগে থেকে বাড়ি এবং বিভিন্ন হাটবাজারে চুল কাটছি। তবে হাট বাজারের কোথাও স্থায়ী হতে পারিনি। যেখানেই চুলকাটি সেখানেই মানুষ ঘর তোলে। ভালো যায়গায় চুল কাটতে কাটতে এখন বর্তমানে আমরা একটি ড্রেনের উপর চুল কাটছি। এখানে সবসময় নর্দমার দুর্গন্ধ। ভালো কোনও যায়গায় আমাদের ঠিকানা হচ্ছে না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের জন্য যেনো হাটের একটি নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পিঁড়িতে চুল কাটতে আসা বৃদ্ধ আব্বাস আলী বলেন, ছোটবেলা থেকেই পিঁড়িতে চুল কেটে নেশা হয়ে গেছে এবং নাপিতের সাথে একটি সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তাছাড়া সেলুনে চুল কাটতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত নেয়। তবে আমরা মানুষ এখানে পিঁড়িতে মাত্র ৩০ টাকায় চুল কাটছি। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে নরসুন্দরদের সাথে কথা বলা হবে। হাট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ভালো কোনও জায়গা নির্বাচন করা হবে।
মন্তব্য করুন