বগুড়ায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ডিবি’র পাঁচ সদস্যসহ গ্রেফতার ৬

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাড়ি থেকে দুই ফ্রিল্যান্সারকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণের পর পরিবারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ওই দুই ফ্রিল্যান্সারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিপণ নিয়ে পালানোর সময় রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসাথে মাইক্রোবাস চালককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-চাপাইনবাবগঞ্জ সদরের শিবতলা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মাদ অনু ইসলাম (৩৯), বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মহেশপাড়া গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে আরএমপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ (২৮), চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের আরজেদ আলীর ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য বছির আলী (৩১), তেলকুপি গ্রামের গাজলুর রহমানের ছেলে আরএমপি সদস্য মাহাবুব আলম (৩১), বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচি গ্রামের আনারুল আকন্দের ছেলে আরএমপি সদস্য রিপন মিয়া (২৯), রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মতিহার থানার ডাশমারি গ্রামের শাহীন আলীর ছেলে মাইক্রোবাস চালক মেহেদী হাসান (২৫)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের সেলিম সেখের ছেলে রাব্বী (১৯) ও কোরবান খানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৪) বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। একই গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে ওহাব আলী (২৮) রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য পদে চাকরি করেন। ডিবি’র পুলিশ সদস্য ওহাব ওই দুই ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে।
ওহাবের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ছয় আসামি একটি মাইক্রোবাস নিয়ে রোববার রাত সাড়ে ১১টায় রাব্বীদের বাড়িতে যায়। ওই রাতে রাব্বী ও তার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন। অপহরণকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঘুমন্ত রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে ডেকে তুলে মাইক্রেবাসে উঠায়। এসময় তারা রাব্বীর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও নিয়ে যায়।
রাত প্রায় ২টায় অপহরণকারীরা রাব্বীর পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে রাব্বীর পরিবারের সাথে দর কষাকষির পর দুই লাখ ও বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ ৩০ হাজার টাক নিয়ে রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ছেড়ে দিয়ে অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস নিয়ে রাজশাহীর দিকে রওনা হয়।
এদিকে রাব্বীর স্বজনরা মুক্তিপণের টাকা দিয়ে অপহরণকারীদের মাইক্রোবাসের পিছনে ধাওয়া দেয় এবং বগুড়া জেলা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে। এসময় জেলা পুলিশ ও নন্দীগ্রামের কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের সহযোগিতায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের শাহজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মাইক্রাবাসসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, একটি ওয়াকিটকি, একটি হ্যান্ডকাফ ও অপহরণকারীদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুনকুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মনোয়ারুজ্জামান জানান, ডিবি পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং তারা পালিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদেরভিত্তিতে তাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে গত রোববার দিনগত রাত ৩টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বীরগ্রাম এলাকা থেকে অভিযুক্ত ডিবি’র অভিযুক্ত ওই পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। একইসঙ্গে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালককেও গ্রেফতার করা হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, রাজশাহী মেট্রোপলিট্রন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র আটক পাঁচ সদস্য ও মাইক্রোবাস চালকের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণের অভিযোগে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেইসাথে গতকাল বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, রোববার রাতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অভিযুক্ত ডিবি’র ওই সদস্যরা ধুনট উপজেলায় এসে এ ঘটনা ঘটায়।
তিনি আরও বলেন, আটক পাঁচজন নিজেদের আরএমপি’র গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র সদস্য বলে পরিচয় দেয়। পরে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারা কাউকে না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বগুড়ায় এসে এই অপরাধ করে। ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আসামিদের থানা থেকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামি ওহাবকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে এ ঘটনায় রাব্বীর বাবা সেলিম সেখ বাদি হয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে ধুনট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত ছয়জনসহ পুলিশ সদস্য ওহাব আলীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর আসামি ওহাব পলাতক রয়েছে।
মন্তব্য করুন