বগুড়ার আদমদীঘিতে মাছ চাষে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায়

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি : মাছচাষে ব্যবহৃত পণ্য এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আদমদীঘি উপজেলায় মাছ চাষে হিমশিম খাচ্ছেন মৎস্যচাষিরা। ইতিমধ্যেই বেশকিছু মাছ চাষি লোকসানের কবলে পড়ে মাছ চাষের হাল ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন। সরকারিভাবে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে দেশে মাছের চাহিদা পূরণে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়ার আদমদীঘি একটি মৎস্য চাষ সমৃদ্ধ উপজেলা। এই উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি শত শত পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এসব জলাশয়ে নব্বইয়ের দশক থেকে মাছ চাষে সফলতা অর্জন করলেও গত কয়েক বছর যাবত বাজারজাত মাছ চাষে ব্যবহৃত পণ্য এবং খাদ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই তুলনায় বাজারে মাছের দাম বৃদ্ধি পায়নি বলে মাছচাষিদের অভিযোগ।
ফলে তারা বাজারজাতকরণের মাছ চাষ করে আগের মতো লাভবান হতে পারছেন না। লোকসানের কবলে পড়ে বেশকিছু মাছচাষি এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আদমদীঘিসহ দেশে মাছের চাহিদা পূরণ হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা মনে করেন। মাছের খাদ্য ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, বাজারজাতকরণের মাছ চাষে প্রধান খাদ্য আতপ চালের ব্যান্ড।
৫ বছর আগে যে ব্যান্ড ৫০ কেজির প্রতিবস্তা ৮শ’ টাকায় বিক্রি হতো সেই ব্যান্ড এখন ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের খুদ ২৫ টাকা কেজি থেকে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, ২২ টাকা কেজির ভুট্টা ৩৭ টাকা, ফিসমিল ছিল ৫০ টাকা কেজি, এখন তা ৭০ টাকা কেজি এবং ভাসমান ফিডের প্রতিবস্তা দাম ছিল প্রকারভেদে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা। বর্তমানে তা এক হাজার ১শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুনমৎস্য হ্যাচারি মালিক আলহাজ্ব রেজাউল হক বাচ্চু জানান, গত কয়েক বছরে যে হারে মাছের খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় বাজারজাতকরণ মাছের দাম বৃদ্ধি পায়নি। ফলে মাছচাষে বিপাকে পড়েছেন মাছচাষিরা।
৫০ একর জলাশয় নিয়ে গড়ে উঠা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মৎস্য খামার আদমদীঘির জিএম এ্যাকোয়া কালচারের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আব্দুল মহিত তালুকদার জানান, গত ১০ বছরে মাছচাষে ব্যবহৃত পণ্য এবং খাদ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় বাজারজাতকরণ মাছের দাম বৃদ্ধি পায়নি। মাছ চাষে খরচ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে এখন আর আগের মতো লাভ হচ্ছে না।
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গত ২০২৪ সালে এই ফার্ম থেকে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৭৫০ কেজি মাছ বাজারজাত করা হয়েছে। সরকারিভাবে মাছ চাষকে এগ্রিকালচার শিল্প ঘোষষা করে বিদ্যুৎবিল প্রদানের ব্যবস্থা ও বিদেশ থেকে উন্নতজাতের মা মাছ আমদানি করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছ চাষিদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন