জয়পুরহাটের কালাইয়ে আশ্রয়ণের ঘরে ঝুলছে তালা, বিক্রি করেছেন অনেকেই

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের কালাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলোর বেশিরভাগই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে অনেকেই অন্যত্র বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ঘর ভাড়া দিয়েছেন, আবার অনেকেই নিজ নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রিও করেছেন। প্রকৃত ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হলেও অনিয়ম করে পছন্দের লোকজনদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
সাথে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ওঠে এসেছে। ২০১৮ সালে কালাই উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে চার দফায় মোট ১৭৮টি আধাপাকা দেয়াল ও উপরে টিনের ছাউনি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সরকারি উদ্যোগটি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে প্রকৃত ভূমিহীনদের পরিবর্তে যাদের নিজস্ব ঘর-বাড়ি আছে তারপরও রাজনৈতিক পরিচয় ও সুপারিশপ্রাপ্তদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই সেখানে না থেকে নিজস্ব বাড়ি-ঘরে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই তালা ঝুলিয়ে কর্মের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে পাড়ি জমিয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজের বাড়ি থাকায় বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।
এসব চিত্র উপজেলার সব আশ্রয়ণ প্রকল্পেই লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বলিগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে আটটি, একই ইউনিয়নের কাঁটাহার আদর্শ গ্রামে ৫৮টি ঘরের মধ্যে ২৭টি, উদয়পুর ইউনিয়নের বিনইল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৫টি ঘরের মধ্যে ১৮টি, শ্রীপুর গ্রামে ১০টি ঘরের মধ্যে চারটি, জিন্দারপুর ইউনিয়নের বাদাউচ্চ আদর্শ গ্রামে ১০টি ঘরের মধ্যে ছয়টি এবং পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল দীঘি গ্রামে ১৫টি ঘরের মধ্যে সাতটি মিলে মোট ১৭৮টি ঘরের মধ্যে ৭০টি ঘরে বরাদ্দ প্রাপ্তদের কেউই বসবাস করছেন না। ঘরগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
উদয়পুর ইউনিয়নের বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পায় সেলিনা বিবি ও রাজিয়া খাতুন। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই তারা সেখানে বসবাস করেন না। তারা নিজ নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর দু’টি ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। আবার শিউলী বেগম নামে এক নারী তার ঘর ৫০ হাজার টাকায় প্রতিবেশী মাজেদা বিবির কাছে বিক্রি করেছেন। অপরদিকে জিন্দারপুর আদর্শ গ্রামে শিল্পী আক্তার ও মজনু মিয়ার নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে তারা বসবাস করেন না। তবে ঘরের মালিকানা ধরে রাখতে তারা দু’জন ওই ঘরগুলোর বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করে আসছেন। ঘরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কেউ বসবাস না করায় স্থানীয় লোকজন এসব ঘরে গবাদিপশু লালন-পালন করছেন। রাতে এসব ঘরে গবাদিপশু থাকে বলেও শোনা গেছে।
আরও পড়ুনঘর বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শিউলি বেগম। তিনি বলেন, গ্রামের মধ্যে আমার নিজস্ব একটি বাড়ি আছে। সেখানেই থাকি। এনজিওতে ঋণ ছিল তাই আশ্রয়ণের ঘরটি বিক্রি করেছি। ঘর ক্রেতা মাজেদা বিবি বলেন, আশ্রয়ণে আমার নামে একটা ঘর আছে। পরিবারে তিন ছেলে-মেয়ে ও স্বামীসহ সবাই মিলে এক ঘরেই বসবাস করি। আমার ছেলে বিবাহ করেছে, একটি ঘরের প্রয়োজন, আমার ঘরের সাথে লাগানো শিউলির ঘর, ওরা এখানে থাকে না। বিক্রি করতে চাইলে আমি ঘরটি কিনেছি। শিউলির মতো আরও অনেকেই এই আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করেছেন। ওদের নিজস্ব বাড়ি আছে।
অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান জানান, বিগত সরকারের সময়ে এই ঘরগুলো নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। যারা ঘর পেয়েও সেখানে বসবাস করছেন না, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হবে এবং প্রকৃত ভূমিহীনদের জন্য নতুনভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া যারা সরকারি ঘর বিক্রি বা ভাড়া দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন