প্রতি জেলায় একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে - সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান

নাটোর ও রাজশাহী প্রতিনিধি : পরিবেশ বন, জলবায়ু ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেছেন, উজানের অনেক কিছুর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। উজানে বাঁধ দিয়ে আমাদের পানি প্রবাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এই ভূখন্ডে যেসব নদী আছে তার যাতে আর ক্ষতি না হয়, সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার।
দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে নদী দখল-দূষণ মুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। যদিও সেগুলো করে যাওয়ার সময় আমরা পাবো না। তাই আপাতত দেশের আটটি বিভাগে একটি করে ও কক্সবাজারে একটি এবং ঢাকায় চারটি নদীর বাজেট প্রণয়ন করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
গতকাল সোমবার দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াল নদী অববাহিকার পানি প্রবাহ ও আটঘরিয়া রেগুলেটর পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহম্মদ মোবাশেরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিএডিসি’র কর্মকর্তারা।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান আরও বলেন, গত ৫৩ থেকে ৫৪ বছরে দেশে আমরা নদীকে যেভাবে দখল করে, দূষণ করে নষ্ট করেছি, সেগুলো এক-দেড় বছরের সরকারের সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ না করে অবকাঠামো দিয়ে, এক ধরনের জেদ করে আমরা যে ক্ষতিটা করেছি তা এই সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, তবে রূপরেখা করে যাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি এসব সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ইটভাটার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুনএজন্য ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে প্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে। পর্বত্য এলাকায় কোন ইটভাটা করতে দেওয়া হবে না। ঢাকার বাতাস বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাস। এজন্য ঢাকাকে ‘নো ব্রিকস ফিল্ড জোন’ ঘোষণা করা হবে। এজন্য বিকল্প ইট উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। পরে তিনি স্থানীয় লোকজন ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সরকারী কর্মকতাদের সাথে মতবিনিময় শেষে রাজশাহী হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এদিকে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদের উৎসমুখ পরিদর্শন করেন এই উপদেষ্টা। সম্প্রতি স্থানটি থেকেই ইজারা ছাড়াই মাটি ও বালু তুলছিলেন স্থানীয় বিএনপি’র কিছু নেতা। ফলে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি ও উপজেলা কমপ্লেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে। বড়াল নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সোমবার পদ্মা-বড়ালের ওই উৎসমুখ পরিদর্শনে যান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি আরও বলেন, এক সময়ের প্রমত্তা বড়াল নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।
বড়াল নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া নদের ১৮ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে এবং নদীর মুখের স্লুইচগেট অপসারণ করা হবে। পদ্মায় পানি না থাকার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা নদীর পানির নায্য হিস্যা বুঝে নিতেও সরকার কাজ করছে। যথাসময়ে ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন করা হবে। আর ভারতের কাছ থেকে পদ্মা নদীর ন্যায্য হিস্যা পেতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন