ভিডিও বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মে মাসে ২০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মে মাসে ২০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : বরেন্দ্রঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত মে মাসে ২৯২.৬ মি.মি. গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। যা বিগত ২০ বছরের মধ্যে খরাপ্রবণ এই জেলায় গড়ে সর্বাধিক। ভরা গ্রীষ্মের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের এই বৃষ্টিপাত প্রাণ-প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চার করেছে। সতেজ হয়েছে গাছপালা। আশা করা হচ্ছে, এই বৃষ্টিতে ক্রমাগত নেমে যাওয়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা হলেও বাড়বে (রিচার্জ হবে)।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে এর থেকে বেশি ৩৩৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল জুন মাসে। এছাড়া ২০২১ সালে একবার ২৭৭ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।  জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় ২০০৩ সাল থেকে কৃষি বিভাগের রেকর্ডে মে মাসে এর চাইতে বেশি বৃষ্টিপাত হয়নি অন্য কোনও বছর।

সংশ্লিস্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ বছর মে মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে সে তুলনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৯৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণের না হলেও ক্রমাগত মরুপ্রবণ অঞ্চলের জন্য এটি সাময়িক হলেও কিছুটা গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে বরেন্দ্রাঞ্চলের এই জেলার পানির বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানির (গ্রাউন্ড ওয়াটার) অভাব ক্রমাগত এতটাই বাড়ছে যে বিপন্ন প্রাণ-প্রকৃতি। জলবায়ু পরিবর্তনের (ক্লাইমেট চেঞ্জ) প্রভাবজনিত অনাবৃষ্টি এবং পানির ব্যবহার বাড়ার কারণকেই এজন্য দায়ী করা হয়।

তবে এ সম্পর্কে এখনও গ্রহণযোগ্য ব্যাপক কোন তুলনামূলক (কমপারেটিভ) সমীক্ষা বা গবেষণার খবর জানা যায়নি কোন সূত্রে। তবে  সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে পানির স্তর নেমে যাওয়া, কি কি কৌশলে এটি পূরণ (রিচার্জ) করা যায় এবং বরেন্দ্রাঞ্চলে কেন বৃষ্টিপাত দেশের অন্য অঞ্চলের থেকে কম এ ধরণের বড় গবেষণা হওয়া জরুরি। তাতে খরা মোকাবেলা সহজ হবে।

প্রধানত আম-ধানের কৃষি প্রধান এই জেলার সকল অর্থ্যাৎ ৫টি উপজেলায় জমিতে সেচের কাজ করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ। এ কাজে তারা প্রায় ১ হাজার ৬শ’ গভীর নলকূপ ব্যবহার করে। বিএমডিএ সূত্র জানায়, জেলার পানির স্তর এতটাই নেমে গেছে যে, এ বছর বোরো-ইরি আবাদ জেলার অনেকাংশে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফলে জেলায় ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে ইরি আবাদ হয়। ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়। ফলে প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার টন ধানের উৎপাদন কমে যায়।

২০২৪  সালের ২১ নভেম্বর বিএমডিএ এক চিঠিতে জানায়, সদর, নচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ০.২৫ থেকে ১ কিউসেক ডিসচার্জ সম্পন্ন গভীর নলকূপে পানির স্তর ‘আশঙ্কাজনকভাবে’ নেমে যাওয়ায় সেগুলো চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে ওই চিঠিতে ইরির সম্পূর্ণ জমিতে সেচ দিতে অপারগতা জানিয়ে ইরি আবাদ নিরুৎসাহিত করা হয়।

আরও পড়ুন

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াসিন আলী বলেন, মে মাসের বৃষ্টি আশাব্যঞ্জক। তবে পানির যে অবস্থা সেজন্য ওই বৃষ্টি আশীর্বাদ। জুনের প্রথমেও  বৃষ্টি অব্যহত রয়েছে। এতে কিছুটা হলেও মাটির নিচের পানির স্তর বাড়বে। আউশ মৌসুম শুরু হয়েছে। আবাদ হবে হবে ৩৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এরপর আমন হবে ৫৪ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে।

বৃষ্টির কারণে এসব আবাদে সুবিধা হবে। আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৯০ টন আম উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টিতে আমের ওজন, আকার, আকৃতি, রঙ, স্বাদ সুন্দর হয়েছে। রোগবালাই, আম ঝরা কমেছে। তবে  সামনের মাসগুলোতে  বৃষ্টি  অব্যহত থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানান তিনি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, জেলার পানি সংকট মোকাবেলায় সদর উপজেলায় মহানন্দা সেতুর কাছে নির্মিত দেশের বৃহত্তম ৩৫৩ মিটার দীর্ঘ মহানন্দা রাবার ড্যাম কাজ শুরু করেছে। এর দ্বারা জেলার ভোলাহাট উপজেলা হয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করা মহানন্দা নদী প্রায় শত কিলোমিটার বয়ে জেলার সকল উপজেলা ছুয়ে পদ্মায় পড়েছে।

ড্যাম বর্ষায় নামিয়ে রাখা হয়। পানি ড্যামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে ড্যাম ওঠানো থাকে। যাতে  নদীতে পানি ধরে রাখা হয়। তখন নদীর পানি দিয়ে সেচসহ অন্য কাজ করা হয়।  এবার মে মাসে বৃষ্টির কারণে বর্ষাকালের মত ড্যাম নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সাত রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু

নতুন করে ফিরছেন জেনস সুমন

খুলনায় বিএনপি নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ-গুলি

ইসরায়েলি সেনাদের বোমা হামলায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন গাজাবাসী

আমার জার্নিটা অনেক পীড়াদায়ক : আফরান নিশো

৮ দিন বিঘ্নিত হতে পারে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের সেবা