ভিডিও বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসে স্বপ্ন পূরণ হলো শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পালের

শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল ৪৪তম বিসিএসে তার পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন। এর আগে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে শরীয়তপুরের নড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও উল্লাস পাল তার শিক্ষা জীবনে কখনো প্রতিবন্ধী কোটার সুবিধা নেননি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও উল্লাস পাল নিজেকে অন্য ১০ জনের মতো নিজেকে সুস্থ মনে করেন।

উল্লাস পাল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের উত্তম কুমার পালের ছেলে। তার বাবা পেশায় মৃৎশিল্পী। মা আন্না রানী পাল গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে উল্লাস পাল বড়। জন্ম থেকেই তার দুই হাত-পা বাঁকা। শিশুকালে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শেখেননি তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের সুস্থ জীবনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বাবা উত্তম কুমার পাল ও মা আন্না রানী পাল। ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসার মাধ্যমে পায়ের অপারেশন হলে কিছুটা হাঁটাচলার উপযোগী হয় উল্লাস। এরপর অধ্যাবসায় আর ইচ্ছেশক্তি দিয়ে শিক্ষা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন উল্লাস পাল।

জানা যায়, উল্লাস পালকে ১৯৯৯ সালে ভর্তি করা হয় কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্ষায় কাদামাটি মাড়িয়ে স্কুলে যাওয়া তার জন্য ছিল কষ্টসাধ্য। ছেলের কষ্ট দূর করতে বাবা তাকে কোলে তুলে নিয়ে স্কুলে যেতেন প্রতিদিন। ডান হাতে শক্তি না থাকার কারণে উল্লাস পাল লেখার জন্য ব্যবহার করত বাঁ হাত। এরপর উল্লাস পাল ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ- ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ঢাকায় এসে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা নর্দান কলেজে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন তিনি।

আরও পড়ুন

এরপর ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৪৬৩তম স্থান অধিকার করেন। পরে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালে বিবিএ এবং পরবর্তীতে এমবিএ সম্পন্ন করেন। উল্লাস পাল বলেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এতো দূর এসেছি। চিকিৎসকদের শত চেষ্টার পরও হাত-পা স্বাভাবিক হয়নি। তবে দেরিতে হাঁটতে শিখেছি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার চ্যালেঞ্জ ছিল অন্যরকম। স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বরাবরই মেধার পরিচয় রাখতে পেরেছিলাম। অবশ্য এসবের কারণ আমার মা-বাবা ও শিক্ষকগণ। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তুরের শিক্ষকরা আমরা আন্তরিকভাবে শিখিয়েছেন। আমার জীবনের সব শিক্ষকই সেরা। কিন্তু যদি বিশেষ করে বলতেই হয়, তবে আমি বলব কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হারুন অর রশিদ স্যার। উল্লাস পালের প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার। ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে একজন পরীক্ষক তাকে নেতিবাচক প্রশ্ন করে বলেছিলেন, প্রশাসন ক্যাডারে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। আপনার যেহেতু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাই এসব কাজ করতে পারবেন বলে মনে হয়? এমন প্রশ্ন শুনে উল্লাস পালের মনে হয়েছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে তিনি মনে হয় তার পছন্দের ক্যাডার প্রশাসন পাননি।

উল্লাস পাল বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ওপর কারও হাত নেই। কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নেতিবাচক কথা বলে তার মনোবল ছোট করা ঠিক নয়। আমরাও চাই আমাদের সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে বিকশিত হতে, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। ৪৪তম বিসিএসে এসে অবশেষে প্রথম পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেলেন উল্লাস পাল।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জের জোতপাড়া নৌঘাট পরিণত হয়েছে মনোরম বিনোদন কেন্দ্রে

লালমনিরহাটে লাম্পি স্কিন রোগে শতাধিক গরু মারা গেছে

বগুড়ার শিবগঞ্জে তিনটি হিমাগারে হামলা-ভাঙচুর, হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ

বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, কারাগারে মাদরাসা সুপার

নওগাঁর রাণীনগরে বিস্ফোরক মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেফতার

নওগাঁর রাণীনগরে ৩ মাদকসেবীর কারাদন্ড