কক্সবাজারে ১২৪ গ্রামের ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
_original_1751902766.jpg)
টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজার শহরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ১২৪ গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদ-নদীর পানি উপচে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ পড়েছে বাসিন্দারা।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
টেকনাফে ৫০টি গ্রামে পানিবন্দী আছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। উখিয়ার ২০টি গ্রাম ও তিনটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পানিবন্দী অন্তত ১৩ হাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও ৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া কুতুবদিয়ায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ৩০ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানান তিনি। এতে ভূমিধসের ঝুঁকিও রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনে। টেকনাফের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত ২৫০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য টেকনাফে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরে আরও দেড় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
শহর ও উপকূলেও জলাবদ্ধতা
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, মোস্তাইক্যাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌরসভার প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ ১২-১৪টি উপসড়ক পানির নিচে রয়েছে। পানিতে ডুবে আছে শহরের কলাতলী সৈকত সড়ক ও হোটেল-মোটেল জোনের অন্তত চারটি সড়ক। এতে পর্যটকদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী মোর্শেদ বলেন, পাহাড় কেটে মাটি ফেলায় নালাগুলো ভরে গেছে, ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
বেশি বিপর্যয়ে টেকনাফ
টানা বর্ষণে টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, বাহারছড়া, সাবরাং ও সদর ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের চার হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বহু পরিবারে রান্নাবান্না বন্ধ, দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট।
আরও পড়ুনটেকনাফ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহ মনির জানান, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে হাজারো মানুষ পানিবন্দী। ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিছু এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, নতুন পাল্লানপাড়া, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া, রাজারছড়া, জাহালিয়া পাড়া এলাকায় মানুষ পানিবন্দী।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, পানিবন্দী লোকজনকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে। আরও লোকজনকে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
উখিয়াসহ ৫ উপজেলায় বন্যা
উখিয়ার তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম ও ৩টি রোহিঙ্গা শিবিরে পানিবন্দী প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শতাধিক সবজিখেত, বীজতলা ও পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পানিনিষ্কাশনের নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে রামুর ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, শ্রীকুল এবং সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বাংলাবাজার, খরুলিয়াসহ ১০-১২টি গ্রামের এক হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে চকরিয়া ও পেকুয়ার দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত। তিন উপজেলায় পানিবন্দী আছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ।
কুতুবদিয়ায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম পাড়া, উত্তর পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে জলোচ্ছ্বাসে। সাগর উত্তাল থাকায় দ্বীপে ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন