ভিডিও শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

চারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে আমন ধান চাষ ব্যাহত

পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে আমন ধান চাষ ব্যাহত। ছবি : দৈনিক করতোয়া

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় :  টানা বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যায় ডুবে আছে গ্রামের পর গ্রাম। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে। অধিকাংশ কৃষক পানির অভাবে এখনও জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরুই করতে পারেনি।

দীর্ঘদিন জমি শুকনো থাকায় জমিতে আগাছা জন্মে গেছে। জমিতে পানি জমে না থাকায় চাষও দিতে পারছে না। অনেক কৃষকের আগাম বীজতলার চারাও নষ্ট হতে শুরু করেছে। সহসা বৃষ্টি না হলে কৃষকের দুশ্চিন্তা বেড়ে যাবে। এতে করে বড় ধরণের ক্ষতির মূখে পড়বেন তারা।

পঞ্চগড়সহ উত্তরের অনেক জেলার আমন ধান চাষ প্রকৃতি নির্ভর। কোন ধরণের সেচ না দিয়ে বর্ষার বৃষ্টির পানিতে কম খরচে আমন ধানের আবাদ করেন কৃষকরা। এই আমন ধান কৃষকের সারা বছরের খাবারসহ পরিবারের খরচের যোগান দেয়। আদিকাল থেকেই চলে আসছে এই নিয়ম। সাধারণত জমিভেদে মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হয়।

এ বছর আষাঢ়ের শুরুর দিকে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃষকরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল। কিন্তু ক’দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় খরা। আকাশে মেঘ জমলেও সেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে না। আষাঢ় মাস এখন শেষের দিকে। এখনও কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে করে দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। কিছু জায়গায় আমন ধানের চারা রোপণ শুরু হলেও জেলার বেশিরভাগ এলাকায় কৃষকরা এখনও একটি চারাও রোপণ করতে পারেনি।

পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ‘বলান’ বা ‘দোগাছি’ চারা রোপণ করে থাকেন এ সময়টাতে। পরবর্তিতে আমন ক্ষেত থেকে সেই চারা তুলে পুনরায় জমিতে রোপণ করেন তারা। এতে করে ধানের ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়। কোন চিটা ধরে না। কিন্তু জমিতে পানি না জমে থাকায় এখনও অধিকাংশ কৃষক ‘বলান’ চারা রোপণ করতে পারেনি।

আর যারা সেচ দিয়ে চারা রোপণ করেছেন; বৃষ্টির অভাবে সেই জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মাটি শুকনো থাকায় আগাছা জন্মে নষ্ট হচ্ছে কচি আমন চারা। বীজতলায় ‘বলান’ চারার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় তা চারায় গিরা হয়ে নষ্ট হতে শুরু করেছে। এদিকে রবি মৌসুমের ফসল ঘরে তোলার পর সেই জমিতে ্এখনও চাষ দিতে পারেনি কৃষকরা। জমিতে আগাছা জন্মে ভর্তি হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

পানির অভাবে চাষও দিতে পারছেন না তারা। পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন জানান, রবি মৌসূমে আমি ভুট্টা, বাদাম ও মরিচের চাষ করেছিলাম। কিন্তু এক মাসের অধিক সময় পার হওয়ার পরও জমি চাষ দিতে পারছি না। শুরুতে বৃষ্টির পানি জমিতে জমে গেলেও প্রচন্ড খরায় তা শুকিয়ে গেছে। এখন জমি ঘাস দিয়ে ভর্তি হয়ে আছে।

এদিকে আগাম ধান রোপণের জন্য বীজতলায় চারা প্রস্তুত করেছিলাম। বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় চারা নষ্ট হতে চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এই চারা তুলে আর জমিতে রোপণের উপযোগী থাকবে না।    
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় এক লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এখন পর্যন্ত মাত্র একশ’ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছে।

আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যাদের চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে তারা যেন সম্পুরক সেচ দিয়ে জমিতে চারা রোপণ করেন। আর যাদের জমিতে পানি জমেনি অথচ বিভিন্ন আগাছা জন্মেছে তারা যেন ওষুধ ব্যবহার করে আগাছা মেরে ফেলে।

এরপর বৃষ্টি হলে ওই জমিতে আর আগাছা জন্মাবে না। আমরা আশা করছি এরই মধ্যে বৃষ্টি হবে এবং পূর্বের বছরের মত আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। চারা রোপণের পর প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে আগের বছরের মত এবারও আমনের বাম্পার ফলনের আশা করেছেন তিনি।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ভেঙে গেছে প্রধান সড়ক

বগুড়ার ধুনটে পুলিশকে কুপিয়ে হাতকড়া পরা আসামি ছিনতাই, গ্রেফতার ১

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ফুলজোড় নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ২ লাখ টাকা জরিমানা

স্বৈরাচারের দোসর চাঁদাবাজদের স্থান বিএনপিতে হবে না : রেজাউল করিম বাদশা

লালমনিরহাটে সড়কের কাজে অনিয়মের অভিযোগ, কাজ বন্ধের নির্দেশ

পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে আমন ধান চাষ ব্যাহত