মাওলানা মোহাম্মদ আবু জাহের
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার করণীয়

মহান আল্লাহর নির্দেশ:“ হে ইমানদারগণ! তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকেও বাঁচাও।”(সূরা তাহরিম, আয়াত-০৬) দুনিয়ার বুকে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দরদ সবচেয়ে বেশী, সৃষ্টি লগ্ন থেকে অদ্যবধি তা প্রমাণিত হয়েছে। আপনি কি জানেন? আপনার সেই মহব্বতের ধন সন্তানটি হতে পারে আপনার জন্য নাজাতের ওসিলাহ অথবা, হতে পারে আবার আজাবেরও ওসিলাহ।
দুনিয়ার ক্ষতি থেকে সন্তানকে বাঁচাতে পিতা- মাতার যেমন পেরেশানির শেষ নেই, তার চেয়ে আরো অনেক- অনেক বেশী পেরেশানি থাকতে হবে সন্তানকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে। কারণ, জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকতে পারাই একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় সফলতা।
আর এজন্য সন্তান লালন-পালনে পিতা- মাতার অনেক বড় ভুমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে। আপনার সন্তানকে যদি আপনার নাজাতের ওসিলাহ বানাতে চান, জান্নাতের পথিক বানাতে চান, জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে ছোটকাল থেকেই তাকে অবশ্যই দ্বীনদার, আদর্শবান সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ প্রসঙ্গেই আজকের লেখায় ইসলামের দিক নির্দেশনা মূলক কিছু পরামর্শ।
পিতা-মাতার সতর্কতা অবলম্বন করা : সন্তান জন্মের পূর্বেই একজন সৎ, দ্বীনদার সন্তানের প্রত্যাশা করে আল্লাহর নিকট আবেদন-নিবেদন করা স্বামী-স্ত্রীর প্রথম দায়িত্ব। সু-সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করবে,“হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে পবিত্র বংশধর দান কর। অবশ্যই তুমি দুয়া শ্রবণকারী।”(সূরা আল ইমরান: ৩৮) মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরহিম (আ:) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক!
আমাকে তুমি একজন নেক সন্তান দান করো।”(সূরা আছ ছফ্ফাত; ১০০) আল্লাহ তা’লা দুয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, নেককার বান্দাহগণ যেন বলে, “হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো এবং তুমি আমাদের পরহেযগার লোকদের ইমাম বানিয়ে দাও।”(সূরা আল ফোরক্বান: ৭৪) হযরত উমর (রা:) ভালো সন্তান কামনা করতে হলে তিনটা কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেন, এক) পিতা একটা ভালো মায়ের ব্যবস্থা করবেন।
ভালো মায়ের গর্ভে ভালো সন্তান হয়, এটা দুনিয়ার ইতিহাসে প্রমাণিত। দুই) সন্তাােনর ভালো নাম রাখতে হবে। ভালো নামের ভালো প্রভাব হয়ে থাকে, এটা ও পরীক্ষিত। তিন) সন্তানকে দ্বীনদার বানানোর জন্য দীনি শিক্ষা (কুরআন ও হাদিস শিক্ষা) দিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
শিশুর কানে আযান ও ইকামত বলা : সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইক্বামত দিতে হবে। এর মধ্যে সন্তান পৃথিবীতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর আগে সন্তানের কানে আল্লাহর বড়ত্বের কথা রাসূল (স:) এর রিসালাতের কথা শুনানো হয়।
এই আজান ও ইক্বামাতের দ্বারা মূলত সন্তানের অন্তরে তাওহিদের বীজ বপণ করে দেওয়া হয়,এর প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে এবং আল্লাহর মেহেরবানীতে তার ইমান নসিব হয়। আর একথা জেনে রাখা দরকার যে,এই আজান, ইক্বামাত দেওয়ার জন্য কোন পুরুষের দরকার হয় না। যদি সন্তানের মা সুস্থ থাকেন তাহলে তিনি দেবেন, না হলে যে সমস্ত মহিলারা ধাত্রী হিসেবে আশে পাশে থাকেন তারা দেবেন, এটা তাদের দায়িত্ব।
মাথা মুন্ডানো : শরিয়তের নির্দেশনা হলো, সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তার মাথা মুন্ডন করবে এবং চুলের ওজন অনুযায়ী রূপা বা রূপার মূল্য পরিমাণ অর্থ সদ্কা করে দিবে। এটা মুস্তাহাব আমল। সাত দিনের মাথায় সন্তানের মাথার চুল মুন্ডন করলে এতে শিশুর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, এমন রেওরাজ ইদানিং আমাদের সমাজে কিছুটা দেখা যায়, এটা ঠিক নয়। কেননা, বান্দার ক্ষতি হবে এমন কোন নির্দেশ শরিয়ত দিতে পারে না।
শিশুর সুন্দর নাম রাখা : নবজাতক শিশুর জন্য একটি সুন্দর, শ্রুতিমধুর অর্থবহ নাম রাখা পিতা মাতার দায়িত্ব। ছেলেদের নামের ক্ষেত্রে আল্লাহর গুণবাচক নাম যুক্ত করে রাখবে আর মেয়েদের নামের ক্ষেত্রে নবিদের স্ত্রীদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখবে। অথবা, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে সুন্দ্র অর্থপূর্ণ নাম বাছাই করে রাখবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, সন্তানের উপর তার নামের তাছির পড়ে থাকে এবং কিয়ামতের দিন বান্দাকে তার এই নাম ধরেই ডাকা হবে।
তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে জেনে শুনে বুঝে নাম রাখা উচিত। বর্তমানে আমরা সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে আনকমন নাম খুঁজি। এর অর্থ ভালো কি মন্দ এ দিকে খেয়াল করিনা, এটা মোটেও উচিত নয়। সন্তানের ইসলামি নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
আকিকাহ করা : আকিকা করা সুন্নত। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। ছেলে হলে দুটি ছাগল বা গরুতে দুই ভাগ। মেয়ে হলে একটি ছাগল বা গরুতে এক ভাগ। তবে আর্থিক সংকট থাকলে ছেলের বেলার একটি ছাগল বা গরুতে একভাগ দিলে ও আদায় হয়ে যাবে। সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে অন্য যে কোন সময় আদায় করে দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
আকিকার গোস্ত কুরবানির গোস্তের ন্যায় তিন ভাগ করে, এক ভাগ আত্মীয় স্বজনকে, একভাগ গরিব-অভাবীকে এবং একভাগ নিজেরা খাবে। আকিকা সম্পর্কে হাদিসে আছে,“ শিশু তার আকিকার বিনিময়ে (আল্লাহর নিকট) বন্ধক রূপে থাকে। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে আকিকা করবে, নাম রাখবে এবং তার মাথা মুন্ডন করবে।” (জা’মি তিরমিযি) সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে চৌদ্দতম দিনে করবে, তাও না পারলে একুশতম দিনে করবে, তাও না পারলে যে কোন দিনে আকিকা করলে তা আদায় হয়ে যাবে।
হারাম থেকে দূরে রাখবে : সন্তানের লালন-পালনে আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, সন্তানকে হারাম খাবার-দাবার থেকে দূরে রাখা। হারাম গ্রহণের দ্বারা মানুষের স্বভাব খারাপ হয়ে যায়। ছোট থাকতেই শিশুদের অন্তরে হারাম ও নাজায়েজ খাবার এবং নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করতে হবে।
হারামকে পরিত্যাগ করার ব্যাপারে আরো একধাপ অগ্রসর হয়ে সন্তান উদরে থাকতেই সন্তানের মাকে হারাম ও সন্দেহজনক জিনিস থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আশা করা যায়, এভাবে পরহেযগারী অবলম্বনের মাধ্যমে যে সন্তান দুনিয়াতে আসবে সে সন্তান নেককার মুত্তাকি হবে ও পিতা-মাতার অনুগত হবে এবং আদর্শবান হবে।
মিথ্যা পরিহার করা : শিশুদের সাথে কখনো মিথ্যা বলা যাবে না। হাসি- কৌতুক করে বা রসিকতা করে ও কখনো মিথ্যা বলা যাবে না। এমনকি মিথ্যা কথা বলে সন্তানদের কান্নাকাটি ও থামানো যাবে না। একদিন এক মহিলা সাহাবি একটা শিশুকে ডাক দিলেন, এদিকে এসো, তোমাকে একটা কিছু দেবো।
রাসূল (স:) মহিলাকে বললেন, তুমি কি আসলে তাকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা করেছিলে, না তাকে কাছে আনার জন্য লোভ দেখাচ্ছিলে? ওই মহিলা বলল, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আসলে আমি তাকে একটা খেজুর দিতাম। রাসূল (স:) বললেন, যদি এমন না হতো, তাহলে তোমার আমলনামায় একটা মিথ্যা বলার কবিরা গুনাহ লেখা হতো। (আবু দাউদ)
আরও পড়ুনসত্য বলার অভ্যাস গড়ে তোলা : শিশু কথা বলা শেখার শুরুতেই তাকে বিশুদ্ধ ভাবে কথা বলা এবং সত্য বলা শেখাতে হবে। যে যত সত্যবাদী হবে, সে তত বিশ্বস্ত হবে। একবার বিশ্বাস ভঙ্গ হলে তা আর পুনরুদ্ধার করা যায় না। মনে রাখতে হবে,“সততাই সর্বোত্তম নীতি।” হাদিস শরিফে রয়েছে, “ সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস করে।”
খাওয়ার আদব শেখানো : সন্তান যখন খাওয়া-দাওয়া শুরু করবে,তখন তাকে হাত ধরে খাওয়াবে এবং খাওয়া-দাওয়ার ইসলামি আদব-কায়দা শেখাবে। ডানহাতে খাবে, বামহাতে খাবেনা, বিসমিল্লাহ বলে খানা শুরু করবে, খানা শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, বসে খানা খাবে, ডানদিক থেকে খানা শুরু করবে, বসে ধীরস্থিরে খানা খাবে, খাওয়া অবস্থায় অযথা কথা-বার্তা বলবে না, ইত্যাদি শরয়ী নীতিমালাগুলো সন্তানকে শেখাতে হবে।
ইদানিং সন্তানকে টিভি বা মোবাইল দিয়ে খাবার খাওয়ানোর যে নোংরা ট্রেডিশান আমাদের সমাজে চালু হয়েছে; এত সন্তানের বেড়ে উঠা, মেধা বিকাশ ও সুস্থ মানসিকতা একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এ অভ্যাস গড়ে উঠলে সন্তানের ভবিষ্যত অন্ধকার নিশ্চিত। সুতরাং, যে করেই হোক, আপনার সন্তানকে মোবাইলের আগ্রাসন থেকে দূরে রাখুন।
দ্বীন শেখানো : সন্তানকে দ্বীনদার বানানো, ইসলামী তরিকায় গড়ে তোলা পিতা-মাতার উপর ফরয দায়িত্ব। হাদিস শরিফে রয়েছে, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, প্রত্যেককেই তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।”(বোখারি ও মুসলিম) সন্তান পিতা-মাতার অধীনস্ত, তাই সন্তান সম্পর্কে পিতা- মাতাকে জবাবদিহি করতে হবে। সন্তানকে প্রথমেই ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া পিতা- মাতার নৈতিক দায়িত্ব। তাকে আল্লাহ, নবি-রাসূল আখিরাত হালাল, হারামের পরিচয় জানানো এবং এগুলো মেনে চলা যে জরুরি তা বুঝানো উচিত।
সন্তানকে আদব-আখলাক, সালাম-কালাম, আচার-ব্যবহার, অযু-গোসল, পাক-নাপাক এবং কুরআন, হাদিসের কথাগুলো শিক্ষা দেওয়া কর্তব্য। ছোট বেলায় কুরআন সহিহ-শুদ্ধ ভাবে শেখানো না হলে বয়স হয়ে গেলে সে যতই চেষ্টা করুক সহিহ উচ্চারণ করে কুরআন শেখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অল্প বয়সেই কুরআন শেখাতে হবে। সন্তানের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কুরআন ও হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা; যাতে করে সন্তান নামায, রোযা হজ, যাকাত সহ ইসলামের যাবতীয় বিষয়াদি জানতে, বুঝতে ও মানতে পারে।
আরবি শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানকে বাংলা, ইংরেজি সহ যুগোপযোগি ভাষা শেখানোর ও প্রয়োজন রয়েছে। মনে রাখতে হবে ,সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে সমস্ত কষ্ট-শ্রম, আশা-ভরসা সবই বৃথা। আমাদের সমাজে আবার এমন অনেকেই আছেন; যারা কুরআন, হাদিসকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
মুখে বলেন, কুরআনে হাফেজের মূল্য অনেক, আলেমের অনেক কদর। কিন্তু নিজে তা শিখলেন না, এমনকি নিজের সন্তানকে ও হাফেজে কুরআন বা আলেম বানানোর চেষ্টা ও করলেন না। এদের জন্য বড়ই আফসোস! এরা সত্যটা বুঝে, স্বীকার করেও দূরে সরে গেল---।
নামাযের তাকিদ দেওয়া : সাত বছর বয়স হতেই সন্তানকে অযু-গোসল,তায়াম্মুম, নামাযের নিয়ম-কানুন সহ এর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দশ বছর বয়স থেকে নামায আদায়ের কঠোর নির্দেশ দিতে হবে। উক্ত বয়স থেকেই আলাদা বিছানায় থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অল্প বয়স থেকে নামাজের অভ্যাস গড়ে না উঠলে সময়মত নামাজ পড়বে না এবং নামাযের প্রতি আগ্রহী হবে না।
এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, “রাসূল(স:) ইরশাদ করেন,“তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাযের -হুকুম দাও, যখন তাদের বয়স সাত বছর হয়। দশ বছর বয়স হলে ( নামায না পড়লে) বেত্রাঘাত কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।”(আবু দাউদ) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয।
সালাতের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (স:) বলেছেন,“ সালাত মুসলমান আর অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং সালাত হচ্ছে দ্বীনের খুঁটি। ”সুতরাং সন্তানকে নামাজি হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে পিতা-মাতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, যার জিন্দেগিতে নামায নেই, রব্বে কারিমের জন্য সিজদাহ নেই, তার মধ্যে আর হাইওয়ানের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
শালীনতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া : সন্তানকে রুচি সম্মত পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করতে শেখানো, ভালো-সভ্য কথা-বার্তা বলতে শেখানো, মন্দ, কুরুচিপূর্ণ কথা-বার্তা, আচার-আচরণ পরিহার করে মার্জিত ও রুচিপূর্ণ চাল-চলনের অভ্যাস গড়ে তোলা পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব।
মন্দ পরিবেশ ও খারাপ সংস্রব থেকে দূরে রাখা : শৈশবকাল থেকেই সন্তানদেরকে ভাল পরিবেশে রাখতে হবে। মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। অসৎ বন্ধু-বান্ধবদের সাহচর্য থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রবাদ রয়েছে-“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” ধর্মীয় বই ও আদর্শবান ব্যক্তিবর্গের জীবনী পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পিতা-মাতা সহ অভিভাবক মহলকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, বর্তমান সময়ের শিশু- কিশোর, যুবক-যুবতির, সকল স্তরের মানুষের চরিত্র হরণের মহা আতঙ্ক “এ্যন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ”এর ছোবল থেকে যে কোন মূল্যেই হোক সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংস নিশ্চিত। সকল প্রকার নাফরমানি থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে রাখতে পিতা-মাতাকে প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোর হতে হবে।
তারপর ও সন্তানকে কোন নাফরমানি কাজে লিপ্ত হতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে,সন্তানের প্রথম বয়সই তার ইসলাহের (সংশোধনের) উপযুক্ত সময়। প্রথমে নষ্ট হয়ে গেলে পরে ইসলাহ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে অবুঝ সন্তান বলে অবহেলা করে ছেড়ে দিলে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হতে হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, আমরা যদি আমাদের সন্তানকে উপরোক্ত ইসলামের নীতি ও আদর্শের আলোকে গড়ে তুলতে পারি, তা হলে তারা আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে উঠবে এবং আমাদের নাজাতের অসিলা হবে। সন্তান ও জাহান্নাম থেকে বাঁচবে, আমরাও পরকালে নাজাত পাবো আশাকরি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন!!
লেখক : ইসলামি গবেষক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট।
সিনিয়র শিক্ষক, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ।
খতিব, মদিনা মসজিদ, বগুড়া সদর।
মন্তব্য করুন