গ্যাস বিস্ফোরণে মর্মান্তিক মৃত্যু

একের পর এক ঘটছে গ্যাস দুর্ঘটনা। গ্যাস চালিত কোনো কিছুই যে আর নিরাপদ নয়। অবহেলায় অলক্ষে গ্যাস চালিত যে কোনো কিছুই মৃত্যুদূত হয়ে উঠছে। যে সব পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় মানুষের বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেসব পাইপ লাইনের মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ বছর পরও এইসব পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
ফলে স্বাভাবিক কারণেই গ্যাস সরবরাহের লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রায়ই গ্যাসের সরবরাহ লাইনে লিকেজ (ছিদ্র) পাওয়া যাচ্ছে, যা বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বাধ্যবাধকতা থাকলেও পাইপ লাইনে ছিদ্র তৈরি হয়েছে কিনা, সেটি ঠিকমতো তদারক করা হয় না। আবার কোনো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গাফলতি দেখা যায়।
বিশেষ করে ২০২১ সালের জুন মাসে মগবাজারে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে এসেছে-একটি গ্যাস কোম্পানির বিচ্ছিন্ন করা সংযোগের পাইপ লাইন থেকে গ্যাস জমে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, রাজধানীর সুত্রাপুুরে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ একই পরিবারের পাঁচজনই মারা গেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার সকালে দগ্ধ চাঁদনী আক্তারকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মারা যান।
এ ঘটনায় একে একে শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার। গত ১০ জুলাই দিবাগত রাত ১টার দিকে সুত্রাপুরের কাগজিটোলার একটি বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হন মোহাম্মদ রিপন (৪০), তার স্ত্রী চাঁদনী আক্তার (৩৫), তাদের ছেলে রোকন (১৪), তামীম (১৮) ও মেয়ে আয়েশা আক্তার (দেড় বছর)।
তাদের উদ্ধার করে রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই রাতে শিশু আয়েশা মারা যায়। ১৫ জুলাই রাতে শিশু রোকন এবং ১৬ জুলাই সকালে তামিম মারা যায়। এরপর ১৭ জুলাই রাতে মোহাম্মদ রিপন মারা যান। আর গত শুক্রবার সকালে বাসায় নেওয়ার পর মারা যান দগ্ধ চাঁদনী আক্তার।
আরও পড়ুনমোহাম্মদ রিপনের প্রতিবেশী মো: জাকির হোসেন বলেন, ‘কাগজিটোলার ওই বাসায় রিপনের পরিবার নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল। রিপন পেশায় ভ্যানচালক। তারা সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করতেন। গত ১০ জুলাই রাতে তারা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল, ঠিক তখন একটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। পরে আমরা গিয়ে দেখি পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে আমরা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাই।
ঘটনাটি হৃদয় বিদারক, পুরো একটি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আমরা শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি এ মর্মান্তিক ঘটনায়। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনা কতটা ভয়ানক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে সেটি অনুধাবন করা জরুরি। একই সঙ্গে এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। যেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হয়।
এটা এড়ানো যাবে না, নানাভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। কখনো রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটছে। কখনো গ্যাসের লাইন লিকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া এর আগেও নানা সময়ে সেপটিক ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ তো আছেই। ফলে যদি একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকে তবে বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অসচেতন সহ নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা থেকেই দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে গ্যাস লিকেজ বা যে কোনো ধরনের বিস্ফোরণ ঘটলে তা কতটা ভয়ানক সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। অসতকর্তা ও নিয়মিত চেকআপের অভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে দেশে। তাই বলব, এখন সময় এসেছে এ রকম উচ্চ শক্তির জ্বালানি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারি দক্ষতা বজায় রাখার। এগুলোও নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
মন্তব্য করুন