রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলেজ ক্যাম্পাসে পানি
বৃষ্টির পানিতে ভাসছে বগুড়া শহর, স্থায়ী জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি চরমে

স্টাফ রিপোর্টার : আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বোঝা দায়। এই ভালো, তো এই খারাপ। একটু আগে ঝকঝকে নীল আকাশ, এই কালো মেঘ। আজ বুধবার (৬ আগস্ট) শ্রাবন মাসের ছিল ২৩ দিন। অনেক বছর পর পুরোদস্তুর বর্ষার রূপ। ছিটেফোঁটা নয়, একেবারে ভারী বৃষ্টি ঝরছে গোটা দেশজুড়ে। বৃষ্টির মাত্রা এতটাই বেশি যে অন্যান্য স্থানের মত বগুড়া শহরের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে জনজীবন দুঃসহ করে তুলেছে।
মোট কথা বৃষ্টির পানিতে গত কয়েকদিন হলো ভাসছে বগুড়া শহরের বেশিরভাগ এলাকাসহ রাস্তাঘাট। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বগুড়া শহরের বেশিরভাগ এলাকাবাসি। আগামীকালও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
রাত থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হলেও সকাল থেকে ঝরতে থাকে তা মুষলধারে। কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকার পর বিকেলে আবারও ঝরতে থাকে বৃষ্টি। এতে আগে থেকে শহরের অধিকাংশ সড়কে জলাবদ্ধতা থাকায় আজ বুধবার (৬ আগস্ট) বৃষ্টির পানিতে বগুড়া শহরের বাদুরতলা, সেউজগাড়ি, সবুজ বাগ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, জহুরুল নগর, জামিল নগর, টিনপট্টি, বড়গোলা, গোহাইল রোড, স্টেশন রোড, মালতিনগর, জলেশ্বরীতলা, জোব্বার ক্লাব, কৈগাড়ি, ঠনঠনিয়া, সাতমাথাসহ শহরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে যায়।
কোন কোন এলাকার রাস্তা ও ড্রেনের পানি রাস্তা ছাপিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসি, পথচারী, ব্যবসায়ীরা। দুপুরের দিকে বৃষ্টি কমলেও শহরবাসীকে জলাবদ্ধতার কারণে চরম কষ্টে পড়তে হয়।
এদিকে বৃষ্টিপাতের জন্য সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছিল শুরু হওয়া এইসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তারা বৃষ্টির কবলে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে বিকল্প পথে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এসময় যানজটে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর পর কেন্দ্র প্রবেশ করেতে দেখা যায়। আর তাদের সাথে থাকা অভিভাবকরা আশ্রয় নিয়েছিলেন কেউ ছাতার নিচে, কেউ কেন্দ্রর আশেপাশের বিল্ডিংয়ের নিচে, নয়তো কেউ কেউ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশার মধ্যে বসে ভিজছিলেন।
আরও পড়ুনঅন্যদিকে সকালের ঝুম বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অফিসে যাওয়া মানুষ এবং খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। যানবাহন সল্পতার কারণে অনেককেই বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এসব কারণে আজ বুধবার (৬ আগস্ট) বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
মৌসুমের এ ঝুম বৃষ্টিতে ড্রেন এবং রাস্তার পানি একাকার হয়ে পড়া এলাকার ভ’ক্তভোগী মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শহরের বাদুরতলা ও সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ও শাকিল আহম্মেদ বলেন, বগুড়া শহরের ড্রেনজ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সামান্য বৃষ্টিপাতেই এই এলাকাগুলোতে পানি উঠে রাস্তা তলিয়ে যায়। আর সেই পানি নামতে সময় নেয় অনেক।
এতে করে এলাকার মানুষের স্বাভাবিক সব কাজকর্ম ব্যহত হয়। তারা জানান, পৌরসভার গাফিলতি, রাস্তার পাশে বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী রাখা, সময় মত ড্রেন পরিস্কার না করাসহ অনেক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন। তারা আরও জানান, পৌরসভার অনেক উন্নয়ন হলেও উল্লেখিত এলাকাগুলোর ড্রেন এবং পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। এটা জরুরী হয়ে পড়েছে বলেও তারা দাবি করেন।
এদিকে সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টির কারণে রাস্তা-ঘাটে পানি ওঠায় রিকশা নিয়ে বের হতে পারেননি অনেক রিকশাচালক। বিকেলে বের হলে বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেলে খানাখন্দকের জন্য রিকশা চালাতে কষ্ট হয় । আবার অনেক সময় পানি ঢুকে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। রিকশা চালকরা বের না হওয়ায় যারা অফিস এবং অন্যান্য প্রয়োজনে বের হয়েছিলেন তারা ছাতা মাথায় দিয়ে, নয়তো যাত্রী ছাউনিতে যানবাহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে থাকেন। আর যারা ভিজে ভিজে রিকশা চালাচ্ছিলেন তারাও ভাড়া হাঁকছিলেন ইচ্ছেমত।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সূত্র জানান, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে আজ বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বগুড়ায় ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝড়েছে। মৌসুমী বায়ুর কারণে এই বৃষ্টিপাত আরও দুই একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সূত্রটি।
মন্তব্য করুন