নওগাঁর রাণীনগরকে পর্যটনমুখী করতে উদ্যোগ বাস্তবায়ন চায় উপজেলাবাসী

নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরের জেলা নওগাঁর নিকটবর্তী উপজেলা রাণীনগর। উপজেলাটির ঐতিহাসিক রক্তদহ বিলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে উপজেলার সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনা খাতকে ঘিরে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাকিবুল হাসান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের দিক নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই বেশকিছু ছোট ছোট উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন ইউএনও। ইতোমধ্যেই উপজেলা পরিষদ প্রশাসনিক ভবনসহ বহুবছরের জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
পরিষদের অভ্যন্তরে পরিত্যক্ত জলাশয় ভরাট করে স্থানটি পুনঃব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিক ভবনটি আধুনিককায়ন করা হয়েছে। পরিষদ চত্বরে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা চত্বরে দীর্ঘদিনের পানির সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অভিমুখে একটি সংযোগ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাতিরপুল এলাকায় রক্তদহ বিলকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতে রতনডারা খালের মাঝে একটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ। যা বাস্তবায়িত হলে বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ যেমন বাড়বে তেমনি স্থানীয় পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করবে।
ইতোমধ্যেই রতনডারা খালের বড় বড় গাছ ও পানির মিলনের দৃশ্য উত্তরবঙ্গের এক বিকল্প রাতারগুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়াও যুব সমাজের ক্রীড়া চর্চা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি আধুনিক ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় ও আন্তঃউপজেলা পর্যায়ে খেলাধুলার আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। শের-এ বাংলা সরকারি কলেজ মাঠকে সংস্কার করে খেলাবান্ধব করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার গোনা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শরিফুল ইসলাম খান জানান, নওগাঁর সবচেয়ে নিকটবর্তী উপজেলা হিসেবে রাণীনগরে কোনো ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। ভৌত অবকাঠামো খাতে তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়াও নেই। তবে গত বছরের শেষের দিক থেকে ক্রমশ পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলার দিকে এগিয়ে চলেছে।
আরও পড়ুনফলে পর্যটন খাতে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, রক্তদহ বিলে যে পাখি পল্লী ও পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে শতাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষায় রক্তদহ বিলে পানির কলধ্বনি, পাখির কোলাহল ও প্রকৃতির অপার রূপ দর্শনে পর্যটকদের কাছে সুপরিচিতি লাভ করেছে উপজেলার পাখি পল্লী। পাখিদের অবাধ আনাগোনা ও বসবাসের জন্য রোপণ করা হচ্ছে গাছ।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপজেলার ত্রিমোহনী বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রবীর কুমার পাল জানান, উপজেলার গলার কাটা রাণীনগর রেলগেট প্রশস্তকরণ, নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঁকা-বাঁকা আঞ্চলিক সড়কটি প্রশ্বস্তকরণ ও পর্যটকবান্ধব রক্তদহ বিল এলাকা ঘিরে নেওয়া প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে পারলে রাণীনগর উপজেলা সত্যিই সারাদেশের মধ্যে একটি মডেল উপজেলায় পরিণত হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ভরা রাণীনগরকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোসহ নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এ বছর পর্যটন খাতে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই বেশকিছু পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়েছে। সর্বোপরি উপজেলার জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মন্তব্য করুন