আধুনিকতার আগ্রাসনেও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে স্বচ্ছল রুবেল-সুকুমার

আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) : দিন বদলাচ্ছে। রুচিশীলতা, সহজলভ্যতা ও দামে কম জিনিসের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ছে। একারণে অতীতের ঐতিহ্যবাহী অনেক জিনিসই এখন বিলুপ্তির পথে। এমনি ক্ষয়িষ্ণু এক শিল্পের নাম বাঁশশিল্প। কালক্রমে প্লাস্টিকের জিনিসের সহজলভ্যতা ও কম দামের কারণে বাঁশের জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা এখনো হাট বাজারে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হয়।
এখনো বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি ও বিক্রির সাথে অনেকে জড়িত। এমনি দুইজন কারিগর হলেন, বগুড়ার ধুনট উপজেলার পাকুড়িহাটা গ্রামের রুবেল ও বথুয়াবাড়ির সুকুমার দাস। প্রতি রোববার ও বুধবার বাঁশের তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্রের পশরা সাজিয়ে বিক্রি করেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী ও ঢেকুরিয়া হাটে। এদের সাথে কাজিপুরের ভানুডাঙ্গা গ্রামের রফিকুল, সুজনরাও বাঁশের তৈরি জিনিস বিক্রি করেন।
গত রোববার সোনামুখী হাটে গিয়ে দেখা মেলে তাদের। বাঁশের তৈরি ডুলি, ডালা, কুলা, চালুনি, খাঁচা, খালুই, হোচা, ঝাড়ু, চাটাই, পলো, টোপা, ভাড়, টোনা, হাতপাখা, টুকরি বিক্রি করছেন হাটের পাশের খোলা জায়গায় পাতানো দোকানে। অবশ্য এসব জিনিসের নামও এলাকাভেদে ভিন্ন।
সুকুমার দাস জানান, তাদের কয়েক পুরুষ এই পেশার সাথে জড়িত। তবে ভাইদের অনেকেই নতুন পেশায় চলে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন এই পেশাতেই। তিনি জানান, বাঁশ কিনে এনে বাড়িতে বিশেষ মাপে কেটে জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। বাড়িতে এই কাজে তার স্কুল পড়ুয়া এক ছেলে ও স্ত্রী সহযোগিতা করে। প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার জিনিস তিনি বিক্রি করেন। বাঁশের দাম ও অন্যান্য খরচ বাদে তার ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা লাভ টেকে।
রুবেলের গল্পটা অবশ্য একটু ভিন্ন। তিনি হাটে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অনেক খুচরা বিক্রেতার নিকটে পাইকারি বিক্রি করেন। বাড়িতে জিনিসপত্র তৈরির জন্যে প্রতিবেশিদের কাজে লাগান। জিনিস বুঝে তিনি তাদের মজুরি দেন। এতে করে বাড়ির কাজের ফাঁকে ফাঁকে বউঝি, এমনকি স্কুল পড়ুয়া ছেলেরাও এই কাজ করে বাড়তি আয় করে।
আরও পড়ুনরুবেল জানান, বাজারে এখন একটি হোচা ৮০ টাকা, ঝাড়ু ৭০-৮০ টাকা, টুকরি প্রতিজোড়া ২২০-২৫০ টাকা, পলো ৭০-৮০ টাকা, বারুন ৪০-৮০ টাকা, টোপা ২০০-২৫০ টাকা, খালুই ৪০-৭০ টাকা, ডালা ৫০-৭০ টাকা, চালুনি ৪০-৫০ টাকা, হাতপাখা ৫০-৮০ টাকা, কুলা ৭০-৮০ টাকা, চাটাই প্রতিজোড়া ১৮০-২৩০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
তবে পাইকারি বিক্রিতে প্রতিটার দাম দশ থেকে কুড়ি টাকা করে কম রাখা হয়। রুবেল আরও জানান, আমার নিকট থেকে পণ্য নিয়ে অনেকেই গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। বর্তমানে বাঁশের সাথে সাথে ছন দিয়েও বিভিন্ন্ সাইজের ডালা, বারুনি বানানো হচ্ছে এবং বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাঁশের জাতের মধ্যে বাঁশনি, তল্লা, জাওয়া জাতের বাঁশ দিয়েই কেবল এসব জিনিস তৈরি করা হয়। প্রতিটি বাঁশের দাম আকারভেদে ৮০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকার মধ্যে। রুবেল জানান, আগে ৫০০ টাকার বাঁশ দিয়ে জিনিস বানিয়ে তা ১ হাজার ৩শ’ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তা কমে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় নেমে এসেছে।
তবে সুকুমার, রুবেলদের দাবি, সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিলে পরিবারগুলো আরও ভালো পণ্য তৈরি করে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি বাঙালির হাজার বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি টিকে থাকবে।
মন্তব্য করুন