সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ ৫ পেয়েছে শেরপুরের দুর্ঘটনায় নিহত সেই মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজ।

এ খবরে বাড়ির সবাই যাকে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠার কথা ছিল, সেই তানাজই আর পৃথিবীতে নেই। তাই আনন্দের বদলে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে আরও বেশি করে বিষাদের ছায়া ঝেঁকে বসেছে।

গত ৩১ মার্চ তানাজের কুয়েতপ্রবাসী মামা সোহাবুর রহমান বাপ্পীকে বিমানবন্দর থেকে আনতে একটি মাইক্রোবাসে করে স্বপরিবারে ঢাকা যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার জামান ফিলিং স্টেশনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী তানাজ ও তার ছোটভাই আড়াই বছর বয়সি শিশু আনাছ। এতে আহত হন তাদের মা-বাবাসহ আরও তিনজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচূড়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব ও মোছা. মনিরা বেগম দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজই ছিল বড়। তানাজ শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। সেই সুবাদে শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় বাড়ি করে সেখানেই থাকত তাদের পরিবার। তানাজ এবার শেরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।

রোববার প্রকাশিত ফল থেকে দেখা যায়, জিপিএ ৫ পাওয়া তানাজ শুধু বাংলা বিষয়ে এ গ্রেড ছাড়া বাকি সব বিষয়েই এ প্লাস পেয়েছে।

শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় তানাজদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একই দুর্ঘটনায় আহত তানাজের মা মোছা. মনিরা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। অসুস্থ অবস্থায়ই মেয়ের কথা স্মরণ করে কাঁদছেন তিনি।

ভেজা চোখে মেয়ের ছবি ও স্কুলের আইডি কার্ডে বারবার হাত বুলিয়ে দেখছেন বাবা মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব।

তানাজের বাবা-মা বলেন, তাদের মেয়ে খুবই মেধাবী ছিল। সে চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ আর মনোযোগ দেখে তারাও একই স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

তানাজের মামা সোহাবুর রহমান বাপ্পী বলেন, “আমার বড় ভাগনী খুবই আদরের ছিল। আমাদের সবার চোখের মনি ছিল সে। কিন্তু এভাবে সে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে কখনোই ভাবিনি।”

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু তারেক জানান, তানাজ খুবই মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ছিল। সে জেএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল। এবারের এসএসসি পরীক্ষাতেও সে খুব ভালো ফল করে।