ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রকৃতির মেলবন্ধন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রকৃতির মেলবন্ধন। ছবি : দৈনিক করতোয়া

স্বপ্নে আচ্ছাদিত আঁখিযুগল এবং দোদুল্যমান মস্তিষ্কের স্নায়ুঝড় নিয়ে ; ভর্তিযুদ্ধে নিজেকে সামিল করতে আমি যখন প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখি তখনই প্রাচ্যের ক্যাম্ব্রিজ খ্যাত সবুজে ঘেরা মতিহার চত্বরের মায়ায় আটকেছি। যে দৃষ্টি মুগ্ধতায় নয় বরং মায়ায় আটকে যায় তাকে উপেক্ষা করা নাকি দুষ্কর! হয়তো এ কারণেই ৭২০ একর জায়গার মাঝে ‘আইন ও ভূমি প্রশাসন’ বিভাগের একটি আসনে আমার ঠাঁই হলো।

দ্বিতীয়বার যখন ভর্তি হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম; তখন চারপাশের বিস্তীর্ণ মাঠ, সজীব গাছের সারি ও নির্মল বাতাসের মাঝে মূল প্রবেশদ্বারের বড় ফলকে লেখা- ‘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, স্থাপিত ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই।' যেন এক নুতন জীবন দানের নিমিত্তে অবতীর্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক কোণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের সমৃদ্ধ করবার প্রাণবন্ত চিত্র রবীন্দ্রনাথের  বিখ্যাত কবিতার,“ অপূর্ব এক স্বপ্নসম, লাগছিল চক্ষে মম।" লাইনটিকে স্মরণ করিয়ে দিলো।

এরপর দেশের ক্রান্তিকালীন সময়কে পেছনে ফেলে জীবন-নদের রোমাঞ্চকর অভিযান পাড়ি দিতে, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এলো আমাদের কাক্সিক্ষত বিভাগীয় অরিয়েন্টেশন। ‘রবীন্দ্র ভবনের' সগর্বিত স্থাপত্যশৈলী যেন আমার মাঝে ইতিবাচক গর্ব অনুভব করায়। চারিদিকে নতুন মুখের কলরব ; সুপিরিয়র-ইনফেরিয়রের সহযোগিতা ও পারস্পরিক পরিচিতির মিলনমেলা!

নতুনদের সাফল্যের পেছনের অভিজ্ঞতা, ছোট-ছোট গল্পকথা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের জীবনের উচাটন এবং লেখাপড়া সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা আর বড় ভাই ও আপুদের আন্তরিক ব্যবহার ও সাড়ম্বরে স্বাগত জানানো যুক্ত হলো স্মৃতির অ্যালবামে। ২৯১ হেক্টর সজীব পরিবেশে একের পর এক ভবন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য হাতের মুঠোয় স্বপ্ন নিয়ে জীবনমূখী শিক্ষা প্রদানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। যেন ‘সেলেনা' রাজ্যের প্রেমের আদর্শ ; পৌরাণিক সমৃদ্ধ, সোনালি শহর ‘এল্ডোরাডো’ রাজ্যের মতো প্রাচুর্য আর শান্তি, পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতীক ‘হাবিটাট' রাজ্যের সমাহার!

মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরেই চোখে পড়ে জাহানারা ইমাম কতৃক উন্মোচিত  ‘শাবাশ বাংলাদেশ' ভাস্কর্যটি। প্রশাসনিক ভবন পেরিয়ে আত্মত্যাগের চেতনায় শায়িত রয়েছেন শহিদ শামসুজ্জোহা স্যার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার যেন  সংগ্রাম ও ত্যাগের চিত্র তুলে ধরে ইতিহাসের শিক্ষা দেয়। ফলে সাম্প্রতিক দাসত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে সংগ্রামের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতাকে জাগ্রত করে তুলেছে।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর মতো পারস্পরিক সমর্থন, বিশ্বাস, বন্ধুত্বের প্রগাঢ়তা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকবৃন্দের পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে আসে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় নবীনবরণ। ৮ অক্টোবর, ২০২৪ অপূর্ব আলোকসজ্জা আর বিচিত্র শোভায় রাবি যেন মহারাজা ধীরাজ! সাথে সকলের সাজে দেশি ঐতিহ্যের ছোঁয়া। মাল্টিপার্পাস বিল্ডিংয়ে উৎসবমুখর ভীড়ে আসন সংকটের মাঝেও বন্ধুত্বসুলভ ঐক্য যেন একের পাশে শূন্য মিলে দশ সৃষ্টির মতো।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একঝাঁক মেধাবীদের প্রতিভার প্রকাশ, সমাপনী বক্তৃতা, অনুষ্ঠানে নব্য শিক্ষার্থীদের সামান্য কিন্তু অর্থবহ উপহার প্রদান অনুপ্রেরণা স্বরূপ আমার মনকে মহিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল-সাদা বাস যেমন উদার আকাশের মতো শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সাক্ষ্য তেমনি বধ্যভূমির নিষ্ঠুরতার ইতিহাস চেতনায় প্রতিবাদের শিহরণ জাগিয়ে দেয়। পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নতুন অর্জনে তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরপুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার শুধু বইয়ের সংগ্রহশালা নয় বরং জ্ঞানের উৎস যা সাহিত্যের ন্যায় আমার প্রাণধর্মকে জাগ্রত করে।

আরও পড়ুন

মেঘজমা আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় দুহাত বাড়িয়ে দিলেই যেমন রোদ হেসে ওঠে; জীবনও ঠিক এমনই। সাপ্তাহিক ছুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদেরও আসে; তবে স্বপ্ন আর চাইলেই বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে মাথা রাখতে পারে না। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরে থাকার কষ্ট উপেক্ষা করে সারাবছর ক্লাস, পরীক্ষা, থিসিস  এসবে আত্মমগ্ন হয়ে মেধাবীরা ছুটে চলে। কাঁধে তাঁদের একটি ছোট ব্যাগ, মনের গহীনে অজানা এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন।

শুধু  ‘প্যারিস রোডের' দুধারের সারিবাধা গাছ আর টুকিটাকি চত্বরের কোলাহল-কত স্বপ্নবাজদের হাসি-কান্নার না বলা গল্প, না খেয়ে থেকে স্বপ্ন বুননের পরিশ্রান্ত উচ্চাশা, ব্যর্থতার কথা নিজের মধ্যে নির্লিপ্তভাবে ধারণ করে রেখেছে। প্রায় একাত্তর বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এ বিদ্যাপীঠে জ্ঞানীগুণী, মহীয়সী, মহাজনসহ আমার বাবা এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলীগণ জ্ঞানার্জন করে নিজেদের বিকশিত করেছেন।

চিরচেনা পরিবেশ থেকে বিয়োগব্যথা; অথচ এরই মাঝে রয়েছে সভ্যতার জন্য কিছু করার নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি, বাবা-মায়ের স্বপ্নভরা চোখ, শিক্ষাগুরুর উপর অগাধ আস্থার পাহাড়সম স্নেহাশিস মাথায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের প্রতিটি বাঁকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আমার রোপিত স্বপ্নের বীজে প্রতিনিয়ত পানি দিচ্ছি যেন সেগুলো ফুলে-ফলে ভরে উঠতে পারে।

 

দীপা সাহা প্রিয়া

লেখক : শিক্ষার্থী,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আইন ও ভূমি প্রশাসন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নাটোর শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান

রেলক্রসিং নিরাপদ করুন

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারি জমি দখল ৩ জনকে জেল জরিমানা

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া মাহফিল

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গাঁজা সেবনে বাধা দেওয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

বগুড়ার সান্তাহারে এক কেজি গাঁজাসহ নারী মাদক কারবারি গ্রেপ্তার