বাঁশের আড়ে শাড়ির শোরুম
রঙ-বেরঙের এই শাড়ির মূল ক্রেতা সাধারণ মানুষ ও বাসযাত্রীরা
হাফিজা বিনা : নেই কোন দামি দোকান। নেই চাকচিক্য মাখানো লাইটিং। শুধুমাত্র কয়েকটি বাঁশের আড়ের ওপরেই চলছে একটি শাড়ির শোরুম। চারিদিকে কোলাহলের মধ্যেই চলছে ব্যবসা। ২শ’ থেকে ৮শ’ টাকার মধ্যে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পছন্দের শাড়ি।
যদিও কেনার সময় একটু দেখে কিনতে হবে। কারণ শাড়িগুলো পুরনো মডেলের এবং অনেক শাড়িতে একটু ছেঁড়াফাটাও আছে। ক্রেতাকে তা দেখে কিনতে হবে। তবে সেখানে কম দামে একেবারে নতুন ত্রিপিস ও পাঞ্জাবিও বিক্রি হচ্ছে। অত্যন্ত ব্যস্ত এলাকার এই ভ্রাম্যমান শোরুমে আশে-পাশের মানুষ এবং বিভিন্ন এলাকার বাসযাত্রীরা মূল ক্রেতা।
বগুড়া শহরের শেষ সীমানা মাটিডালি বিমান মোড়ের গোল চত্বরের ঠিক মাঝখানে মো. জহুরুল সরকারের শাড়ির খোলা শোরুম। তার বাড়ি গোবিন্দগঞ্জের রাখালপুর ইউনিয়নে। দীর্ঘদিন হলো তিনি এই ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন। এরআগে তিনি ঢাকা শহরের নারায়নগঞ্জ, বাইপাইল, নবীনগর ছাড়াও বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় রাস্তার পাশে এভাবেই ব্যবসা করতেন। গত ৫ আগস্টের পর বগুড়ার মাটিডালি বিমানমোড়ের এই স্থানে এসে ব্যবসা শুরু করছেন। শাড়ি, ত্রিপিস ও পাঞ্জাবি গুলো নিয়ে আসেন ঢাকা থেকে।
বিশেষ করে শাড়িগুলো আনেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দোকানে অনেক আগে থেকে পড়ে আছে বিক্রি হয়নি। আবার কোন কোনটার একটু ফুটা ও ছেড়া আছে সেগুলো। দোকানমালিকরা সেই শাড়িকাপড়গুলো কম টাকায় ছেড়ে দেন। তারা তা কিনে এনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করে দেন। এই কাজে তাকে সাহায্য করে তার ছেলে।
ব্যবসায়ী জহুরুল জানান, অনেক আগে থেকেই শোরুমের অবিক্রিত কাপড় কিনে এনে বিক্রির ব্যবসা করছেন। মুলত যেখানে মানুষের ভিড় বেশি সেখানেই রাস্তার পাশে তিনি এই ব্যবসার পসরা নিয়ে বসে যান। তার এই পসরা সাজাতে বেশি খরচ হয়না। ১০ ফিট উঁচু করে তিনটি বাঁশের আড় টানিয়ে তার ওপরে অনেকটা কাপড় মেলে দেয়ার মতো করে শাড়িগুলো শো করা হলেই ব্যস মানুষের চোখে পড়ে। ক্রেতারা শাড়ির রং দেখে কাছে এসে তার দরদাম করে প্রয়োজন অনুযায়ী কাপড় কিনে নিয়ে যান। তিনি জানান, প্রতিদিন ২ থেকে ৮ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়।
আরও পড়ুনএতে তার ভাল লাভ হয়। ক্রেতা সম্পর্কে তিনি জানান, যারা সাধারনত রাস্তায় চলাফেরা করেন তারাসহ অনেক টিকটকার আসেন কমদামে রংবেরঙ্গের কাপড় নিয়ে যান। এছাড়াও অনেক দর্জি আসেন ছেঁড়াফাটা একটু দামি কাপড় কিনতে। তারা এগুলো নিয়ে কেটে ডিজাইন করে নতুন পোশাক বানিয়ে বিক্রি করেন। আবার অনেকে গ্রামের বাড়ির ঘরের চালের নিচে চান্দা বানানোর জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যান। তিনি আরও জানান তিনি শুধু শাড়িই বিক্রি করেন না বিক্রি করেন নতুন ত্রিপিস ও পাঞ্জাবিও। কারণ অনেকে স্ত্রীর জন্য শাড়ি কেনার পর মেয়ের জন্য জামা চান। তাদের জন্য এই ব্যবস্থা রেখেছেন। তার এই শোরুম সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খোলা থাকে সপ্তাহের ৫দিন।
বেলা ১২টা মেয়ের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন অটো রিকশাচালক শামছুল আলম। বললেন, প্রতিদিন বিমান মোড় থেকে শহরের মধ্যে ভাড়া মারার সময় এই শাড়ি কাপড়ের ওপর নজর পরে। বিভিন্ন রঙের শাড়িগুলো দেখতে ভাল লাগে। ভাবতাম মেয়ের জন্য একটা সুন্দর শাড়ি কিনে দেব। তাই কয়েকটা টাকা জোগার করে আজ কিনতে এসেছি। তিনি বার বার দেখছিলেন পুঁথি এবং চুমকির কাজ করা শাড়িগুলো। যে শাড়িটা পছন্দ হয়েছে সেই শাড়ির আচলের দুই জায়গায় দুটো ফুটো আছে।
দোকানি সেই সমস্যার সমাধানও করে দিতে রাজি। ফুটোর জায়গাতে একটু রিপু করে সেখানে পুঁথি বসালে আর বোঝা যাবে না। কিন্তু শামছুল রাজি না। মেয়েকে ছেড়া কাপড় দিবেন না। পড়ে টাঙ্গাইলের একটি শাড়ি ৩শ’ টাকায় কিনে নিলেন। এরপরে এলেন হোসনে আরা নামের ষাটোর্ধ এক নারী। গিয়েছিলেন শেরপুরে বোনের মেয়ের বাড়ি। বাড়ি ফেরার পথে শাড়ির দোকান থেকে কিনে নিলেন ঘরের চান্দা দেয়ার জন্য দুটো একই ধরণের ম্যাজেন্ডা কালারের একটু সিল্ক টাইপের শাড়ি। দাম দিলেন ৪শ’ টাকা। বললেন সস্তায় পেলাম।
মন্তব্য করুন