গত বছরে বগুড়ায় ৯৫ জন খুন, নেপথ্যে আধিপত্য ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব

স্টাফ রিপোর্টার : গত বছর ২০২৪ সালে বগুড়ায় ৯৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে জেলায় ৭৭টি খুন সংঘটিত হয়। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, চাঁদাবাজি ও জমি-জমা নিয়ে বিরোধসহ নানা কারনে বগুড়ায় হত্যাকান্ড বাড়ছে। তবে শহরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশি আর গ্রামে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের কারনে বেশি খুনোখুনি হচ্ছে।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, বিগত ১৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খুনের ঘটনা ঘটে আসছে বগুড়ায়। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া তুচ্ছকে কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা ঘটছে। যে ঘটনায় একটি চড় মারারও প্রয়োজন নেই, সেই ঘটনায় মানুষকে খুন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া শহরে যারা খুন হচ্ছে তাদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামিও। তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের ক্যাডার। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনে বিরোধের সূত্র ধরেও খুনের শিকার হচ্ছে ক্যাডাররা। খুনের ঘটনা বাড়লেও অধিকাংশ খুনিরা রয়েছে অধরা।
সংলিষ্ট সূত্র বলছে, গত বছর ২০২৪ সালে বগুড়া জেলায় মোট ৯৫ জনকে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া সদরে ৩৩ জন, শাজাহানপুরে ৯ জন,শিবগঞ্জে ৭ জন, সোনাতলায় ৪ জন,গাবতলীতে ৮ জন,সারিয়াকান্দিতে ৩ জন,আদমদিঘীতে ৫ জন,দুপচাঁচিয়ায় ৬ জন, নন্দীগ্রামে ২ জন, কাহালুতে ৮ জন, শেরপুরে ৩ জন ও ধুনটে ৭ জন খুন হয়েছে।
অপরদিকে, এর আগের বছর ২০২৩ সালে মোট ৭৭ জনকে খুন করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া সদরে ১৫ জন, শাজাহানপুরে ৭ জন, শিবগঞ্জে ১৩ জন, সোনাতলায় ৫ জন, গাবতলীতে ২ জন, সারিয়াকান্দিতে ৩ জন, আদমদিঘীতে ৪ জন, দুপচাঁচিয়ায় ৩ জন, নন্দীগ্রামে ৮ জন, কাহালুতে ৪ জন, শেরপুরে ৮ জন ও ধুনটে ৫ জন খুন হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে খুনের ঘটনা বেড়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ১৮টি খুন বেশি হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়ায় সবচেয়ে আলোচিত দুটি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি শাজাহানপুরে ও অন্যটি বগুড়া সদরে।
আরও পড়ুনগত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল মন্ডলপাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার (৩৩) ও তার সহযোগী স্বপন (২৮)কে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন রামদা দিয়ে কুপিয়ে সাগর ও তার সঙ্গী স্বপনকে নৃশংসভাবে হত্যা চলে যায়।
সে শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল হাটখোলা পাড়ার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে ও সেচ্ছাসেবকলীগের কর্মী। তার সহযোগী স্বপন একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। এ সময় সাগরের অপর সহযোগী মুক্তার হোসেন (৩৬) গুরুতর আহত হয়েছে। তার হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়। স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত শাবরুল এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটে আসছে।
এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের কাছে এলোপাথারীভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সদর উপজেলা সেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে হত্যা করা হয়। এরপর মিজানের অনুসারিরা ঘাতক সন্দেহে ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে প্রতিপক্ষের সানোয়ার হোসেন লেদো নামে আরও একজন গুরুতর আহত করে।
পরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে মিজানের অনসারিরা সেখানেও লেদোকে আরেক দফা মারধোর করলে তিনি মারা যান। স্থানীয় সূত্র জানায়, আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জের ধরে যুবদলের বহিস্কৃত এক নেতার নেতৃত্বে মিজানকে খুন করা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় জড়িত অধিকাংশ আসামিরা রয়েছে অধরা।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, পূর্ব ঘটনার জের ধরে বগুড়ায় খুনের ঘটনা ঘটছে। তবে হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন