রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌক্তিক সমাধান জরুরি

২০১৭ সালে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশার বাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি-এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে এবং বর্বর হত্যাকান্ড থেকে প্রাণ বাঁচাতে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার আগে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে কক্সবাজারের শিবিরে বসবাসরত ১৩ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন। পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী দেখেননি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ। পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, কিন্তু তখন আবার বিশ্ব জুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘ অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ব একটি গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তে। কারণ আর্থিক সহায়তা কমার ফলে ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার তুলনায় ২০২৫ সালে সহায়তা নাটকীয়ভাবে ৪০ শতাংশে নেমে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে।
আরও পড়ুনএদিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় শুক্রবার এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন সেখানকার মানুষ। বিশেষ করে সেখানে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে অবশ্যই। এদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিশ্বের দুই বরেণ্য ব্যক্তি প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে করেছেন ইফতারও।
তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখেছেন। এ সময় রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রাখাইন রাজ্যে ফিরতে পারে, সে জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা চান অধ্যাপক ইউনূস। উত্তরে গুতেরেস জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। মিয়ানমারে ফেরার পর তাদের যেন কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে না হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। কারণ রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত না হলে এ প্রত্যাবাসন টেকসই হবে না। প্রত্যাবাসনের স্বার্থে তাই এদিকেও নজর দেওয়া হবে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। ফলে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। বৈশ্বিক পর্যায়ে কূটনীতি জোরদার করা ছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর কোনো বিকল্প সম্ভবত নেই।
মন্তব্য করুন