ভিডিও বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

শাড়ির চাহিদা কমেছে, তবুও থেমে নেই বেচাকেনা

শাড়ির চাহিদা কমেছে, তবুও থেমে নেই বেচাকেনা। ছবি : দৈনিক করতোয়া

স্টাফ রিপোর্টার : পঁচাত্তর বছর বয়সী বুলবুল বেগমের ঈদের দিন সকালে পাটভাঙ্গা শাড়ি চাই-ই-চাই। ষাট বছর আগে মাত্র পনের বছর বয়সে বউ সেজে শ্বশুর বাড়ি আসেন। সেই তখন থেকে এখন অব্দি ঈদের সকালে গোসল করেই সুতি নতুন শাড়ি পরা তার অভ্যেস। যখন বালিকা বেলায় বধূ হয়ে এসেছিলেন তখন ঈদের সকালে নতুন শাড়ি পরে স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির মুরুব্বিদের সালাম করে রান্নাঘরে যেতেন। আর এখন মধ্য সত্তরে চিকন পাড়ের পাটভাঙ্গা তাঁতের শাড়ি পরে বসে থাকেন।

একে একে সন্তান-নাতি-পুতিরা তাকে সালাম করেন। তবে বুলবুল বেগমের মনে একটি চাপা কষ্ট তার সময়ে বাড়ির বউরা সবাই ঈদের সকালে গোসল সেরেই শাড়ি পরতেন, এখনকার বউরা শাড়ির বদলে সালোয়ার কামিজ পরেন।

এখন থেকে দেড় দশক আগেও বাড়ির বউ বা মেয়েদের ঈদের প্রধান পোশাকই ছিলো শাড়ি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের চাহিদা ও রুচি। এখনকার নারীরা স্বাচ্ছন্দবোধ অনুযায়ী পোশাক পরতে বেশি পছন্দ করেন। সেটা ধর্মীয় উৎসব কিংবা পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানেই হোক। তবুও এখনো অনেকেই নিজেদের বাঙালিয়ানা ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঈদে অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি শাড়ি পড়তেই বেশি পছন্দ করেন।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বগুড়ার বিভিন্ন মার্কেট ও শোরুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। জমে ওঠেছে ঈদের কেনাকাটা। জমে উঠেছে শাড়িরও কেনাবেচা। তবে এবার শাড়ির চাহিদা অন্য বছরগুলোর তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এবার দামি শাড়ির তুলনায় মাঝারি দামের শাড়িই ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

বিগত বছরগুলোর মত ভারতীয় সিরিয়াল বা হিন্দি মুভির নাম অনুসারে শাড়ি নেই। মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, সুতি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, বিভিন্ন প্রিন্টের শাড়ি, সিল্ক, হালকা সিল্ক, কাতান, নকশি শাড়ি, পার্টি ও জামদানি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সুতি শাড়ির। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ভারতীয় শাড়ির দাপট কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫ রোজার পর থেকে ঈদ কেন্দ্রিক বেচা-কেনা বাড়লেও শাড়ির ক্রেতা কিছুটা কমেছে। এবার শাড়ির দামও খুব একটা বাড়েনি। গত বছরের মত এবার একই দামে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া নিউ মার্কেটে ৫৫০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি বেশি বেচাকেনা চলছে। অন্যদিকে, তরুণীদের পছন্দ সিল্কের শাড়ি। বিশেষ করে শাড়ির আঁচল ও পাড়ে এবার সোনালি জমাট কারুকাজের চাহিদা বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানের শুরুর দিকে বিক্রি তেমন একটা ছিল না। তবে ১৫ রমজানের পর থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।

গীজা সিল্ক, কাটিং শাড়ি, লেহেঙ্গা শাড়ি, চুন্রী সিল্ক। গীজা সিল্ক বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকায়, লেহেঙ্গা শাড়ি ৯ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় মহিশুর সিল্ক, ইক্কত সিল্ক। এছাড়া ট্রেডিশনাল শাড়ি হিসেবে এবারও ঈদের বাজার দখল করে আছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় ধুপিয়ান সিল্ক, ১৫শ’ থেকে ১০ হাজার টাকায় কান্জি ভারম কাতান । এবার ঈদেও দেশী ট্রেডিশনাল শাড়ির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে  ১৩ হাজার ৫শ’ টাকায় জুট কাতান, ৩ থেকে ৭ হাজার টাকায় জুট বেনারসী, মিরপুরী কাতান, ৩ থেকে ১৫ হাজার টাকায় জামদানী।

চোখ ধাঁধানো এতসব দামী শাড়ির মধ্যেও এবার সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা চলছে দেশী গ্যাস কটনের সুতি শাড়ি। সব বয়সী নারীদের উপযোগী করে বিভিন্ন ডিজাইনের এই শাড়ির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা। ঈদ উপলক্ষে বগুড়া নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় গড়ে ওঠা বুটিক সেন্টার ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে জমে উঠেছে কেনাবেচা।

ক্রেতারা তাদের সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী ছুটছেন এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে, এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। তবে এবার অন্যান্য পণ্যের মত শাড়ির দামও তেমন একটা বাড়েনি। কোনো কোনো শাড়ি ব্যবসায়ী সামান্য কিছুটা বেড়েছে দাবি করলেও কেউ কেউ বলছেন অন্য কথা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে সফলভাবে স্থাপিত হলো টারবাইন

গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকার ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়- সাবেক এমপি কাজী রফিক

জামায়াতের পক্ষ থেকে অর্থ সহযোগিতা পাচ্ছেন নৌকাডুবিতে বাবা-মা হারানো ছোট্ট দিপু

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে গণহত্যা দিবস পালন

বগুড়ার ধুনটে ২ ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণের পরিকল্পনাকারী পুলিশ গ্রেফতার

বগুড়ায় ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু : প্রথম দিন দীর্ঘ লাইন