নওগাঁর বাগানগুলোতে মুকুলে ভরপুর গাছে আম নেই, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

নওগাঁ প্রতিনিধি : বসন্তের আগমনে নওগাঁর প্রতিটি আমবাগান এবছর মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো ছিলো। গেলো কয়েকবছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর মুকুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। উচ্চ ফলনের স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু গত ১৫ দিনের ব্যবধানে নওগাঁর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৭০-৮০ শতাংশ বাগানে এখন গতবছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। উকুন পোকা, তীব্র খরা এবং আবহাওয়াজনিত কিছু সমস্যার কারণেই বাগানগুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। বাগানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন আমচাষিরা।
নওগাঁর অধিকাংশ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা এবং নিয়ামতপুর উপজেলায়। সম্প্রতি পোরশা, সাপাহার এবং পত্নীতলার আম বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানের ৮০ শতাংশ গাছেই কাঙ্খিত পরিমাণ আমের দেখা মিলছে না। গত মৌসুমের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর ১০-১৫ শতাংশ আম রয়েছে। এই পরিমাণ আমে উৎপাদ খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষকরা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমির বাগানে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার টন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গতবছর জেলায় ৩০ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গেল বছরের তুলনায় জেলায় এ বছর ২শ’ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুননওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আমবাগান রয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত নেই। যার কারণে উকুন পোকার আক্রমণ অনেক বেশি। বাগানে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না। গতবছর বাগান থেকে আম বিক্রি করে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো পেয়েছিলাম। শ্রমিক, কীটনাশক, পরিবহন এবং সেচ খরচসহ গতবছর প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিলো। এবছর তীব্র তাপদাহের কারণে অধিকাংশ মুকুলই ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় বাগানে এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু খরচ গতবছরের মতোই হবে। খরচ উঠাইতে পারবো কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতবছর মার্চ মাসে যে তাপমাত্রা ছিলো তার থেকে এবছর মার্চ মাসে তাপমাত্রা কম ছিলো। আর বছররের এই সময়টাতে তাপমাত্রা একটু বেড়েই থাকে। মুকুলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমের গুটির পরিমাণ বেশি তাই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাগানে যে আম রয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন