শেষ সময়েও অবিক্রিত পশু নিয়ে বিপাকে লালপুরের খামারিরা

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ে পশুর যত্ন এবং বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এবছর নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার কোরবানির পশু বেচাকেনা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে।
তবে এবার শেষ সমেয়ও কোরবানির পশু বিক্রি করতে না পারায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন লালপুরের খামারিরা। খামারি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘প্রতিবছর যেমন কোরবানির পশু কেনার ক্রেতা থাকে এবার তেমন ক্রেতা নেই।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার খামারি মাজদার রহমান তার খামারে ১১টি কোরবানিযোগ্য গরু প্রস্তুত করেছেন। মে মাসের শুরু থেকে গরুগুলো বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। পশুগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে লালন-পালন করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫ টি গরু বিক্রয় করেছেন। প্রতিটি গরু বিক্রয় করেছেন ২ লাখ টাকা দামে। যে দামে গরু বিক্রয় করেছেন তাতে তিনি খুশি নন। তার পরেও ক্রেতা না থাকায় প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখনো তার খামারে অবিক্রীত রয়েছে ৬টি গরু। অনলাইনেও বিক্রির চেষ্টা করেছেন কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাননি তিনি।
মাজদার রহমানের মতো এমন অনেক খামারি ঈদুল আজহার সময় অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে গবাদি পশু মোটাতাজা করেছেন। এবার গরুর চাহিদা কম থাকায় শেষ সময়েও গরু বিক্রয় করতে না পারায় বিপাকে রয়েছেন তারা। অনেকেই আবার প্রত্যাশিত ক্রেতা খুঁজে না পেয়ে গরু নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। উদ্দ্যেশ্য বেশি দামে বিক্রি করা।
লালপুর উপজেলার স্টেডিয়াম এলাকার খামারি রনি আলী জানান, তার খামারে ৯টি গরু রয়েছে এর মধ্যে একটি ১৫ মণ ওজনের একটি গরু রয়েছে। কোরবানির ঈদে বিক্রির আশায় গত চার বছর যাবৎ গরুটি লালন-পালন করেছেন তিনি। পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তার প্রত্যাশিত ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম হলে তিনি গরু টি বিক্রয় করবেন। এখন পর্যন্ত এমন তেমন ক্রেতা পাননি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এসে গরুটি কে দেখে যায়, কেউ প্রত্যাশিত কোনো দাম বলে না। তার পরেও আশাবাদী যে, শেষ সময় তিনি ক্রেতা খুঁজে পাবেন।’ লালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছর কোরবানি ঘিরে উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৩ হাজার খামারে কোরবানিযোগ্য ৭৬ হাজার ১৭৬ টি গবাদি পশু মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। এর মধ্যে চাহিদা রয়েছে ৪১ হাজার ১৩৫টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩৫ হাজার ৪১টি।
লালপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় ও নিয়মিত সাপ্তাহিক পশুর হাট মধুবাড়ী। এই হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে অনেক পশু এসেছে। কিন্তু সাধারণ ও পাইকারি ক্রেতা সংখ্যা খুবই কম। হাটে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিরভাগ ক্রেতা এখন শুধু মূল্য যাচাই করতে আসছেন কিনছেন কম। এবার কোরবানির পশু তুলনায় কেনার ক্রেতা কম। ফলে এবার গরুর দামও কম।
আরও পড়ুনজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু কিনতে আসেন এই হাটে। এছাড়া জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুইটি অনলাইন প্লাটফরম ‘নাটোর পশুর হাট’ ও ‘অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট’ থেকে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লালপুরের কলসনগর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মিজান আলী জানান, গত শনিবার চান্দুরাহাটে ১০টা গরু নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ৬টা বিক্রয় করতে পেরেছেন বাকি ৪টা ফেরত এসেছে। গত রোববার রাজশাহী সিটি হাটে অবিক্রিত ৪টা গুরু নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করেছেন তবে লস হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
গরু গুলি কেনা ছিলো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, বিক্রয় করতে হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। প্রতিবছর গরু বিক্রয় করে লাভ হয়। যারাই দু-একজন আছে তবুও ছোট ও মাঝারি গরুর কিনছেন বড় গরুর চাহিদা নেই।’
তবে, হাটে আসা ক্রেতারা দাবি করেছেন, তারা ভেবেছিলেন এ বছর পশুর মূল্য কম হবে। কিন্তু, বিক্রেতারা বেশি দাম চাইছেন।
লালপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ্ জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় ৭৬ হাজার ১৭৬ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদেরকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কোরবানির হাট ও মহাসড়কে গরু বোঝাই যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তসহ মনিটরিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার আমজাদ হোসাইন।
মন্তব্য করুন