ভিডিও শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

অসহনীয় ভ্যাপসা গরম, বৃষ্টি হলেই শুধুমাত্র মিলবে স্বস্তি

অসহনীয় ভ্যাপসা গরম, বৃষ্টি হলেই শুধুমাত্র মিলবে স্বস্তি। প্রতীকী ছবি

স্টাফ রিপোর্টার : অসহনীয় গরম। সময়ের আগেই প্রবেশ করেছে বর্ষা। কিন্তু দেখা নেই বৃষ্টির। আজ শুক্রবার (১৩ জুন) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা  ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু বাতাসে আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় এবং দীর্ঘসময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শরীরে তাপ অনুভব হচ্ছে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও বেশি। এমন আবহাওয়ায় শিশু এবং বয়স্ক মানুষের দিকে সতকর্তা রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আগামী রোববার আষাঢ়ের প্রথম দিন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপপ্রবাহ থেকে স্বস্তি মেলার সম্ভাবনা আছে জানিয়েছে আবহাওযা অফিস।

কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করলেও ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি থেকে নিস্তার মিলছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃষ্টিপাতের ধরণ সম্পর্কে তারা জানান, বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়বে, তবে তা একটানা হবে না। দিনের কিছু সময় বৃষ্টি হতে পারে, এরপর আবার গরম ফিরে আসবে। আজ শুক্রবার (১৩ জুন) নীলফামারীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে  ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায় জলীয় বাস্পের পরিমাণ ছিল ৮৭ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত বগুড়াসহ দেশের ২৬ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে সূর্যের উপস্থিতি মানুষের সকালের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। সেই সাথে  বাতাসে জলীয় বাস্পের ব্যাপক উপস্থিতির জন্য দর দর করে ঘাম হওয়ার কারণে অস্বস্তি বেড়ে গেছে।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তীব্রতা  যেন চুলার আগুনের মত গায়ে বিধছে। বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়ার মত অবস্থা হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রোদের তীব্রতায়। এই আবহাওযায় সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছেন শ্রমজীবী মানুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা। এরই মধ্যে অনেকেই জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা  ও হার্ট এ্যাটাকের মত জটিল সমস্যায় পড়েছেন।

এমনই একজন বগুড়া শহরের গোহাইল রোড এলাকার একটি এপার্টমেন্টের বাসিন্দা  ফজলুল হক বলেন, তার ফ্লাটটি  টপ ফ্লোরে পশ্চিমপাশে অবস্থিত। সারাদিন বাড়িতে টিকতে পারছি না।  সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিছানা, মেঝে, এমনকি আসবাবপত্রগুলোও তেতে  থাকছে। দিনের বেলা তো বিছানায় শুয়ে থাকা যাচ্ছেই না,রাতেও স্বস্তি মিলছে না।

গরমে ঘুম ভাল না হয়ে কেমনযেন পাগল পাগল লাগছে। হার্টের রোগি। যে কোন সময় বিপদ হওয়ায়র আশঙ্কায় আছি। বৃষ্টি দরকার পরিবেশে। সেই সাথে একটু স্বস্তি চাই আমরা। এদিকে চলমান তাপদাহে  স্বাস্থ্য বিভাগ সতকর্তা জাড়ি করে  পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এ সময় প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে  রোদে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিশেষ করে খেটেখাওয়া মানুষেরা যেন মাথায় কাপড় বা ছাতা ব্যবহার করে গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করেন।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, জ্যৈষ্ঠের শেষ সপ্তাহ থেকে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমের তীব্রতায় ছোট বড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেকে।

আরও পড়ুন

তবে জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদেও কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। আজ শুক্রবার (১৩ জুন) রৌমারীর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ সব বয়সী মানুষ। শিশুসহ বয়স্করাও একটু ঠান্ডা পেতে পুকুরে বা নদীতে নেমে পড়ছেন। কেউবা পান করছেন ঠান্ডা পানি বা শরবত। অপরদিকে এ অবস্থায় হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে গরম জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেশি।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রখর রোদ আর গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আজ শুক্রবার (১৩ জুন) এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।

তীব্র গরমে রাস্তা ঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে, কর্মজীবী মানুষও নানা সমস্যায় পড়ছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অতিরিক্ত গরমে শহর ও গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু আর বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রখর রোদে কাজে যেতে পারছেননা দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষেরা।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রচন্ড তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষজন। অনেকে আখের রস, লেবু পানি ও শরবত খেয়ে তৃৃষ্ণা নিবারণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন পুরোপুরি তৃষ্ণা মিঠছে না।

দুপুর ১২ টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফাঁকা হয়ে পড়ছে ফুলবাড়ী পৌরশহরের রাস্তাঘাট। তাপদাহ আর গরমের জন্য চাহিদা বেড়েছে দই, ঘোল, শরবত, তালেরশাসসহ কোমল পানীয়গুলোর। দুপুরের দিকে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই অবস্থা। 

রংপুর জেলা প্রতিনিধি জানান,রংপুর ও আশপাশ এলাকায় কয়েকদিন থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আকাশে মেঘের কোন ছিটেফোটা নেই। প্রচন্ড গরমের কারণে মানুষজন এবং জীবজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রচন্ড গরমের কারণে প্রায় ঘরেই জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে।

গরু, হাঁস-মুরগির খামারিরা তাদের পশুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। তপ্ত রোদের কারণে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, আজ শুক্রবার (১৩ জুন) রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পাবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গরুর মাংসের টিকিয়া রেসিপি

আরও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে তেহরান জ্বলবে : ইসরায়েল 

ফরিদপুরে মোটরসাইকেল-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

কক্সবাজারে পুকুরে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে আবারও ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ

গাজীপুরে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আটক ৪৫