পাবনার গাজনার বিলে স্লুইসগেটের পানি ছাড়ায় তলিয়ে গেছে ২শ’ বিঘা জমির আমন ধান

পাবনা ও সুজানগর প্রতিনিধি : হঠাৎ করে স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেয়ায় তলিয়ে গেছে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের ২০০ বিঘা জমির আমন ধান। কীভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষকদের সাথে আলোচনা না করে স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দাবি, পাটচাষী ও মৎস্য সম্পদের কথা চিন্তা করে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার বাদাই গ্রামের অংশে গাজনার বিলে পানিতে ভরে গেছে। পানির ওপর কিছু কিছু ধানগাছের সবুজ মাথা বেরিয়ে আছে। বেশিরভাগ ধান পানিতে ডুবে আছে। কৃষকরা নিজের হাতে বপন করা ধানের এমন দৃশ্য দেখে দিশেহারা।
বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ। এবার দশ বিঘা জমিতে আমন ধান বপন করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এক রাতের ব্যবধানে পানিতে তলিয়ে গেছে তার সাত বিঘা জমির ধান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বকুল শেখ বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। এর ওপরই নির্ভর। আমার তো উপায় নেই। এখন আমার কি হবে। আপনারা যদি ক্ষতিপূরণ দেন তাহলে বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে পারি।
শুধু বকুল শেখই নন, তার মতো আরও শতাধিক কৃষকের কপালে একই চিন্তার ভাঁজ। হঠাৎ করেই তালিমনগর স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে তলিয়ে গেছে গাজনার বিলের প্রায় ২০০ বিঘা জমির বোনা আমন ধান। এখন কীভাবে এই ক্ষতি পোষাবেন তা ভেবে কুল পাচ্ছেন না কৃষকরা।
অভিযোগ, সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষকদের সাথে আলোচনা না করে স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেয়ায় এই ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। কৃষক রিজাই শেখ ও নাদের শেখ বলেন, আমাদের এখানে তালিমনগর স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু তিনি আমাদের সাথে কোনো আলোচনা পরামর্শ না করে পানি ছেড়ে দিয়েছেন। এক রাতের মধ্যে ধান সব ডুবে গেছে। এর আগে কখনও এমন হয়নি।
কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, বিলের ৫০০ বিঘা জমির মধ্যে ২০০ বিঘা জমির আমন ধান এখন পানির নিচে। যদি ধীরে ধীরে অল্প করে পানি ছাড়া হতো তাহলে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না আমাদের। সুজন বিশ্বাস ও আকতার হোসেন নামে অপর দুই কৃষক বলেন, এই আমন ধানটা আমাদের খরচ খুবই কম হয়। এই ধানে বছরের খাবারের একটা ব্যবস্থা করি আমরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন আশা সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন এর ক্ষতিপূরণ চাই।
আরও পড়ুনএ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ এর দাবি, ‘পাটচাষীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ও বিলে মৎস্য সম্পদের কথা চিন্তা করে জুলাই এর শুরুতে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ পাট কাটার সময় উপযুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পানির সংকট রয়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানির সাথে রেণু পোনা বিলে আসে। এসব মিলিয়ে গত ১ জুন পানি ছাড়া হয়।’
তবে যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, আমাদের জানালে কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নেয়া হবে’ যোগ করেন তিনি।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পানি ছাড়ার বিষয়ে কৃষকরা আমাদের জানিয়েছিল যে পানি যেন একেবারে না ছেড়ে আস্তে আস্তে ছাড়া হয়।
বিষয়টি আমরা ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু উঁচু এলাকার পাটচাষীদের চাপ ও দাবির প্রেক্ষিতে পানি ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। এখানে আসলে সবার কথাই মাথায় রাখতে হয়। তবে পাম্প হাউজের মাধ্যমে পানি টেনে নিলে বেশিরভাগ জমির ধান রক্ষা পাবে।’
কৃষি কর্মকর্তা জানান, সুজানগর উপজেলায় এবছর দুই হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৭৭ মেট্রিকটন চাল।
মন্তব্য করুন