৬ মাসে ২৯ জন নিহত
যে কারণে বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার : দিন দিন বগুড়া ও তার আশপাশ এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অসচেনতায় এ সব মৃত্যুর প্রধান কারণ। রেললাইন পার হওয়ার সময় বা লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় মোবাইল ফোন ও কানে ইয়ারফোন ব্যবহার করা, রেললাইন ধরে অসতর্কভাবে হাঁটা, রেললাইনের পাশ দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব না মেনে যাতায়াত করা, না দেখে তাড়াহুড়া করে লেভেলক্রসিং পার হওয়া, চলন্ত ট্রেন আসার সময় সেলফি তোলার চেষ্টা, রেললাইনের ওপর বসে বেখেয়াল হয়ে গল্প করাসহ নানা কারণে বগুড়া ও তার আশপাশ এলাকায় ট্রেনে কেটে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এছাড়া চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও আছে।
রেলওয়ে পুলিশ সান্তাহার থানার ইনচার্জ (ওসি) মো: হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আজ ৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬ মাস ৮ দিনে বগুড়া, নাটোর ও জয়পুরহাট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এ সব মৃত্যুর ঘটনায় থানায় ২৯টি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার থানা এলাকার সান্তাহার থেকে সোনাতলা, নাটোরের বাগাতিপাড়া মালনচি স্টেশন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও বাগজানা পর্যন্ত মোট ১৯৫ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে শুধু বগুড়া এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ৮ জন। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই বিকেল ৩ টা ৫ মিনিটে বগুড়া শহরের ওয়াপদা গেটের সামনে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ পশ্চিম-দক্ষিণপাশে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান কলেজ ছাত্র মোস্তাকিম। বগুড়া রেল স্টেশন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত মুস্তাকিম (২৪) বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অনার্স হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
তিনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিমাদ্রিপাড়ার সুলতান হোসেনের ছেলে। তবে তিনি শহরের পুরান বগুড়ায় একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশুনা করতেন। তিনি আরও জানান,ওই এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে রেললাইন পার হতে গিয়ে সান্তাহার থেকে পঞ্চগড় গামী দোলনচাঁপা নামে একটি লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় শিক্ষার্থী মুস্তাকিম নিহত হন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেল নিয়ে রেললাইন পার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এ সময় মোটরসাইকেলটি রেললাইন ঘেষে হঠাৎ থেমে যায়। মোটরসাইকেলটি মুস্তাকিম চালাচ্ছিলেন। ওর পিছনের সিটে তার বন্ধু বসা ছিলেন। এ অবস্থায় রেল লাইনের উপরে মোটরসাইকেলটি থেমে যায়। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনটি কাছে এসে যায়। এ সময় তার বন্ধু মোটরসাইকেলর পিছন সিট থেকে নেমে যেতে সক্ষম হলেও মুস্তাকিম নামতে পারেননি। ততক্ষণে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান মুস্তাকিম।
আরও পড়ুনরেলওয়ে সান্তাহার থানার ইনচার্জ (ওসি) মো: হাবিবুর রহমান বলেন, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু। রেললাইন ধরে অসতর্কভাবে হাঁটা, কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে যাতায়াত, তাড়াহুড়া করে রেলক্রসিং পার হওয়া, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ এবং চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তোলাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। এছাড়া চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা তো আছেই। ট্রেন ঘিরে হত্যাকাণ্ডের মতো আরও ঘটনাও ঘটছে।
জিআরপি’র এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, রেলের প্রচলিত আইনে রেললাইন ধরে হাঁটা অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু লাইন নয়, লাইনের দুই পাশে (১০ ফুট করে) ১৪৪ ধারা জারি থাকে সব সময়। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, এই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়।
এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদি পশু চরলেও তা আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এ আইন প্রতিনিয়তই ভঙ্গ করছেন পথচারীরা। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, রেললাইন যে এলাকায় রয়েছে সেসব এলাকায় বিট পুলিশিং করা হয়। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা হয়। মানুষ সচেতন না হলে রেলের দুর্ঘটনা কমবে না।
মন্তব্য করুন